কেন, কীভাবে অকালে মরছে মানুষ

Looks like you've blocked notifications!
পৃথিবীর মানচিত্রে দেখুন কীভাবে কোন অঞ্চলের মানুষ অকালে বেশি মারা যাচ্ছে। ছবি : ভক্স

পৃথিবীর সব দেশেই মানুষের একটা গড় আয়ু থাকে। একটি অঞ্চলের আবহাওয়া, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ধরে নেওয়া হয় যে সেখানকার মানুষ আনুমানিক কতদিন বাঁচতে পারে। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অনেক সময়ই দেখা যায় গড় আয়ু পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান অনেকে।

সময়ের আগেই যখন কেউ মারা যান, তখন সেটাকে মনে হয় প্রকৃতির সবচেয়ে রুঢ় বাস্তবতা। কারণ তাদের হয়তো বেঁচে থাকলে অনেক কিছু করার ছিল। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের রোগে, দুর্ঘটনায়, মস্তিষ্কে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হয়ে বার্ধক্যে পৌঁছানোর আগেই অনেক মানুষ অকালে মারা যায়।

দেখা গেছে, যেসব দেশে নাগরিকদের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আছে, সেখানে হয়তো রোগ-বালাই বা সংক্রমণের মাধ্যমে অসুস্থ হয়ে মানুষের মৃত্যুহার কিছুটা কম হয়। ফলে সেসব দেশে গড় আয়ু বাড়ে আর বাড়ে তাদের জীবনমান।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ-সংক্রান্ত করা গবেষণার ফলাফল নিয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ভক্স ইলুমিনেট। সেখানে দেখানো হয়েছে যে, কীভাবে অর্থনৈতিক অবস্থার তারতম্যের কারণে মৃত্যুহার কমে-বাড়ে। ২০১৩ সালে বিশ্বের মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সময় নিয়ে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনই ভিডিওচিত্রটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্বের  দারিদ্র্যপীড়িত জনসংখ্যার দেশগুলোতে প্রতিরোধযোগ্য রোগে মৃত্যুর হার বেশি। আফ্রিকার অনেক দেশে অকালমৃত্যুর কারণ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ। যেমন এইডস, ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়া। এসব রোগে যারা মারা যায়, তাদের সবারই বয়স অনেক কম। মারা যাওয়া প্রতি ১০ জনের মধ্যে চারজনেরই বয়স ১৫-এর নিচে।

অন্যদিকে বিভিন্ন ধনী দেশ, যেমন- সৌদি আরবে অকালমৃত্যুর কারণ বিভিন্ন ধরনের কাজের ঝুঁকিপূর্ণ চর্চা। যদিও দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যা অর্থাৎ নারীরা রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতি পান না, তারপরও সেখানে এখন সড়ক দুর্ঘটনা এই অকালমৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ।

সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, সৌদি তরুণদের মধ্যে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল দেখানোর প্রবলতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে শিথিল ট্রাফিক আইনের কারণেও দেশটিতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রতিদিন সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১৯ জন মানুষ মারা যায়। একই অবস্থা এর পাশের দেশ কাতার, ওমান ও আরব আমিরাতের।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ অকালে মারা যায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে। পাশের দেশ ভারতে এই হার ঘটে হৃদরোগের কারণে।

অন্যদিকে ভেনিজুয়েলায় অকালে মারা যায় সহিংসতায়। প্রতিবছর ২৫০০ হাজার মানুষ সহিংসতার কারণে দেশটিতে মারা যায়। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে অবাধে খুনের মতো ঘটনা ঘটে সেখানে। আর এটাই দেশটিতে অকালমৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। ভেনিজুয়েলায় সহিংস ঘটনায় এত বেশিসংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার কারণ হলো এসব ঘটনার মাত্র আট শতাংশ বিচারের আওতায় আসে। একই ঘটনা দেখা যায় ভেনিজুয়েলার প্রতিবেশী রাষ্ট্র কলম্বিয়াতেও।

চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অকালমৃত্যুর কারণ জড়িত এদের উচ্চমাত্রার অর্থনীতি বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন। যেমন চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে মেখানে দূষণ বেড়েছে, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াটাকে অকালমৃত্যু বলে ধরা হয় না। কারণ যারা এভাবে মারা যায়, তারা অন্যদের তুলনায় তাদের গড় আয়ুর অনেকটা সময় বেঁচে প্রায় শেষ দিকে হঠাৎ করেই মারা যায়।

অকালমৃত্যুর হার অনেক বেশি মনে হলেও গবেষকরা বলছেন, ধীরে ধীরে অকালে মৃত্যুর হার বিশ্বব্যাপী কমে আসছে।