কী কারণে ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন

Looks like you've blocked notifications!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবর্তন প্রক্রিয়ার নতুন ‘শিকার’ হয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার। তাঁর জায়গায় জন বোল্টনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া এক টুইট বার্তার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কী কারণে নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে এই পরিবর্তন আনলেন।  

এক সপ্তাহের কম সময় আগে ট্রাম্প দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টেলারসনকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক মাইক পোম্পেওকে নিয়োগ দেন। 

দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের প্রায় ৪০ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।  

এবার ম্যাকমাস্টারকে সরানো এবং বোল্টনের নিয়োগে এটি স্পষ্ট যে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। এ বছরের মে মাসের শেষের দিকে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়, এমনকি স্থানও নির্ধারিত হয়নি। 

ইরানে পারমাণবিক চুক্তির বিষয়টিকে বোল্টনের এই নিয়োগ আরো ভয়াবহ করে তুলতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির কতটা কঠোর হতে হবে, এ নিয়েও সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেহেতু ট্রাম্প এখন পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাইছেন।  

অবশ্য বোল্টন বলেছেন, ‘আজ বিকেলে আমি সত্যিই এ ধরনের ঘোষণা আশা করিনি। তবে এতে আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি এখনো অবাক, মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

নিজের গোঁফ এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ওয়াশিংটনে বোল্টন বেশ পরিচিত। হোয়াইট হাউসের বর্তমান পরিস্থিতিতে বোল্টনের এই নিয়োগ এরই মধ্যে কংগ্রেস নেতাদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। 

এক বিবৃতিতে ডেমোক্রেটিক সিনেটর জেক রিড বলেন, ‘এটা মোটেই ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। কার্যকরী নিরাপত্তা উপদেষ্টা হতে যে মেজাজ বা মানসিক ধাত দরকার, তা বোল্টনের নেই।’

২০১৫ সালে করা ইরানের পারমাণবিক চুক্তিতে পরিবর্তন আনতে ইউরোপ রাজি না হলে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তখনই বোল্টন টুইট করেছিলেন, ‘চুক্তি বাতিল করা দরকার।’

এমনকি রাশিয়ার সাইবার যুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন বোল্টন। 

এদিকে দেশটির সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কার পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইলিয়ট আব্রামস সহকর্মী বোল্টনের এই নিয়োগের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুজনই বুশ প্রশাসনে ছিলাম। তখনই বোল্টন প্রমাণ করেছেন, তিনি কতটা চমৎকার ও পারদর্শী উপদেষ্টা।’

কিন্তু বুশ জমানায় জাতিসংঘের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বোল্টন ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে এসে নিজস্ব চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। 

তবে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোল্টন বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর কথাগুলো পেছনেই ফেলে এসেছেন তিনি। উপদেষ্টা হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রতিফলিত করবেন বলে বোল্টন জানান। তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রেসিডেন্ট কী বলছেন আর আমি কী পরামর্শ দিচ্ছি।’

সাবেক ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পূর্ব এশিয়াবিষয়ক প্রতিরক্ষা সহকারী সচিব আব্রাহাম ডেনমার্ক বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি-পূর্ববর্তী সামরিক আগ্রসনের সমর্থক ছিলেন বোল্টন। ট্রাম্প প্রশাসনে তাঁর নিয়োগ সেই ধারণাকে শক্তিশালী বার্তা দিল।’

২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমণ ছিল বুশের ‘হুমকি-পূর্ববর্তী সামরিক আগ্রসনের’ অংশ। তখন ইরাকে বিধ্বংসী মারণাস্ত্র থাকা এবং সাদ্দাম হোসেনের গণহত্যার কারণ দেখিয়ে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে এসব ভুয়া ও অতিরঞ্জিত বলে প্রমাণিত হয়। 

পারস্পরিক সমঝোতা : ম্যাকমাস্টার ও ট্রাম্পের পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর আগে এই পদ থেকে মাইকেল ফ্লিনকে সরিয়ে ম্যাকমাস্টারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময় ট্রাম্প ও ম্যাকমাস্টার তর্কে জড়িয়ে পড়তেন। তাই পরিবর্তন চাইছিলেন ট্রাম্প ।

যদিও ট্রাম্প তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘ম্যাকমাস্টারের কাজের জন্য আমি তাঁর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। তিনি অসাধারণভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তিনি সব সময় আমার বন্ধু থাকবেন।’

হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু সময়ের জন্য দুজন আলোচনা করেছেন। অনেক চিন্তাভাবনার পর এই পরিবর্তনের প্রয়োজন বোধ করেছিলেন দুজনই। এ সিদ্ধান্ত কোনো একটা মুহূর্ত বা কোনো একটা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বরং এটা তাদের দুজনের মধ্যে আলোচনার ফল।’

আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত নিজ দায়িত্বে বহাল থাকবেন ম্যাকমাস্টার। অবসর নেওয়ার জন্য তিনি নিজেও অনুরোধ করছিলেন বলে এক বিবৃতিতে জানান ম্যাকমাস্টার। 

তবে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে একটির পর একটি বহিষ্কার ও রদবদলের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্পের ফায়ারিং লাইনে এরপর কে?