আজকাল বারাক ওবামা কী বই পড়ছেন?

Looks like you've blocked notifications!

‘ছোট থাকতে আমি বই পড়তে খুব ভালোবাসতাম।এর একটা কারণ হলো আমি অনেক বেশি ঘুরতাম।সারা পৃথিবী ঘোরার যে অভিজ্ঞতা তা একান্তই আপনার।এই অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি আপনি রোমন্থন করতে পারেন। এগুলো আমাকে ভাবাত।’ কথাগুলো গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমকে বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

এখন একজন সাধারণ নাগরিক হয়েও বারাক ওবামা কিন্তু দুর্দান্ত পাঠক। গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি একটি পোস্ট করেন। পোস্টে সাম্প্রতিক সময়ে পড়া পাঁচটি বইয়ের নাম বলেন বারাক ওবামা। তিনি লিখেন, ‘আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয়, আমি আজকাল কী পড়ছি, লিখছি বা দেখছি। তাই ভাবলাম শেয়ার করি।’

বারাক ওবামা  বইগুলোর সমালোচনাসহ লিখেছেন। লিখাগুলো এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো :

"Futureface: A Family Mystery, an Epic Quest, and the Secret to Belonging"

১. ‘ফিউচারফেস, এ ফ্যামিলি মিস্ট্রি, এন এপিক গেস্ট, অ্যান্ড দ্য সিক্রেট টু বিলঙ্গিং’:  বইটি লিখেছেন সাংবাদিক অ্যালেক্স ওয়াগনার। এক সময় তিনি গণমাধ্যম এমএসএনবিসির উপস্থাপিকা ছিলেন। আর এখন ‘দ্য সার্কাস’ নামের একটি শোতে তিনি সহ-আয়োজক হিসেবে কাজ করছেন। বইটিতে লেখিকা তাঁর কর্মজীবনের এই প্রবাহ নিয়ে লিখেছেন। লিখেছেন নিজের জটিল পারিবারিক ইতিহাস নিয়েও।
এই বইটি বারাক ওবামার জন্য নিজেকে আবিষ্কারের গল্প। বইটি সম্পর্কে তিনি লিখেন, ‘আমি একবার আমার নিজের পরিচয় নিয়ে একটি বই লিখেছিলাম। তো, আমি খুব কৌতূহলী হই, যে অ্যালেক্স কী লিখেছেন। অ্যালেক্সের মা মিয়ানমারের নাগরিক, অন্যদিকে বাবা আয়ারল্যান্ডের। তিনি আমার বন্ধু ছিলেন।’  তিনি বলেন, ‘বইটি আমাদের ভাবায়, যে আমরা আসলে কে?’

২. দ্য নিউ জিওগ্রাফি অব জবস : বইটির লেখক এনরিকো মরেত্তি। গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী এই বইয়ে লেখক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থান বা শহরের যে ক্ষমতা বা গুরুত্ব তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন, তিনি বলেছেন, গত দশকে স্যান হোসে বা অস্টিনেই অর্থনৈতিক উল্লম্ফন হয়েছে, যা অন্য কোথাও ঘটছে না।

এই বইটি নিয়ে ওবামা লিখেছেন, ‘এখন ছয় বছর হয়েছে। কিন্তু এখনো একটি সময়োপযোগী এবং বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা রয়েছে যে বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে পরবির্তনশীল অর্থনীতি কীভাবে কাজ করে এবং শ্রমজীবী আমেরিকানদের অবস্থার উন্নতির জন্য নীতিনির্ধারকরা কীভাবে শিখতে পারেন।’

৩. হোয়াই লিবারেলিজম ফেইল্ড : লেখক ইউনিভার্সিটি অব নটরডেমের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক প্যাট্রিক জে ডেনিন বইটিতে উদারনীতি বা লিবারেলিজম সম্পর্কে লিখেছেন। তিনি বলেছেন, উদারনীতি হলো একটা মতাদর্শ, যা সমাধিকার, স্বাধীন নির্বাচন ও ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। লিখেছেন, ‘এটা এমন এক প্রক্রিয়া যার সফলতা থেকেই ব্যর্থতার জন্ম হয়।’

বইটি পড়ে ওবামা লিখেছেন তিনি এই নীতি বা মতাদর্শে বিশ্বাসী নন। সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বইটি মানুষের চিন্তাকে প্রভাবিত করতে লেখা। আমি  লেখকের বেশির ভাগ সিদ্ধান্তের সঙ্গেই একমত নই।’

৪. ইন দ্যা শ্যাডো অব স্ট্যাচুস : আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বর্ণ বৈষম্য নিয়ে এই বইটি লিখা। লিখেছেন মিচ অ্যান্ড্রু।

ওবামা লিখেছেন, সাউথ ক্যারোলাইনা ২০১৫ সালে রেভারেন্ড ক্লেমেন্টা সি পিংকনি একটি চার্চে গুলি করে হত্যা করা হয়। বইটিতে ক্লেমেন্টার প্রশংসা করেই লেখা হয়েছে, যা পাঠক মনকে আন্দোলিত করে।

ওবামা লিখেছেন, ‘জীবিত থাকতে ক্লেম (ক্লেমেন্টা সি পিংকনি) যা বলেছিলেন, তা আমি কখনোই ভুলব না। পুরো দক্ষিণাঞ্চলে ইতিহাসের খুব কদর রয়েছে। তবে সবসময়ই আমরা পরস্পরের ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানাই না। এই বিষয়টিই মিচ তার বইয়ে তুলে ধরেছেন, যা আমাদের ইতিহাসের সবচাইতে বেদনাতুর অধ্যায়। আর কীভাবে এই ঘটনাগুলো এখনো পুনরাবৃত্তি ঘটছে।’

এই বইটা এমন একটা পদক্ষেপ, যা আশা জাগায় যে, দক্ষিণ আমেরিকা আবারও জেগে উঠবে, অতীতকে সমর্থন করে নয়, পেছনে ফেলে।’

৫. ট্রুথ ডিকেই : বইটি আমেরিকার জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণ নিয়ে লিখা। লিখেছেন জেনিফার কাভানাগ এবং মাইকেল ডি রিচ। বইটিতে লেখকরা চলমান রীতিনীতি এবং সত্যের অনুসন্ধানে সমাজের আগ্রহ কমে যাওয়ার যে প্রবণতা সেটি নিয়ে গবেষণা করেছেন।

এই বইটি নিয়ে ওবামা লিখেছেন, ‘বইটি আত্ম ব্যাখ্যামূলক। কিন্তু বইটিতে যা পাওয়া যায়, তা খুবই মজার। নিজের পছন্দমতো সত্য ও প্রমাণকে শ্রেণিভুক্ত করা শুধু অসততা নয়, বরং সমাজের কাছে নিজেকে পরাজিত করা। যা বিতর্ক এবং বাস্তব জীবনে সমস্যা সমাধানে আমাদের সতেজ করতে পারে।’