ক্যানসার আক্রান্ত শিশু লিখল নিজের মর্মস্পর্শী অবিচুয়ারি

Looks like you've blocked notifications!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া শহরে বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত পাঁচ বছরের এক শিশু মারা যাওয়ার আগে নিজেই নিজেকে নিয়ে অভিনব এক অবিচুয়ারি (মৃতের জন্য স্মৃতিচারণা) লিখে রেখে গেছে। শিশুটির নাম গ্যারেট ম্যাথিয়াস।

গত সোমবার বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মস্তিষ্কের হাড় ও স্নায়ুজনিত বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল গ্যারেট। নয় মাসের তীব্র যন্ত্রণা শেষে গ্যারেট গত ৬ জুলাই চিরদিনের জন্য বিদায় নেয়।

গ্যারেটের হয়ে তার মা এমিলি আর বাবা র‍্যন ম্যাথিয়াস অবিচুয়ারিটি সংকলিত করেন। অবিচুয়ারিজুড়ে জীবন আর মৃত্যু নিয়ে গ্যারেটের রসিকতা পাঠককে গভীরভাবে স্পর্শ করে। গ্যারেট সেখানে লিখেছে চিকিৎসার দিনগুলোতে নিজের অসহ্য যন্ত্রণার কথা।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্যারেটের অবিচুয়ারিটি ছড়িয়ে পড়েছে।

গ্যারেট অবিচুয়ারিতে বেঁচে থাকার আনন্দের কথা লিখেছে। সেই তালিকায় সে প্রথমেই লিখেছে বোনের সঙ্গে তার খেলা করার কথা। আর লিখেছে ডে কেয়ারের বন্ধু, ব্যাটম্যান, আইসক্রিম ব্লু বানি ও  থ্রাশ মেটাল সংগীত ভালো লাগার কথা।

এরপর অপছন্দের তালিকায় গ্যারেট লিখেছে নিজের ঘাতক সেই ‘ক্যানসারের’ কথা, যা তাকে বাঁচতে দিল না। গ্যারেট ক্যানসারকে সম্বোধন করেছে ‘হাবা ক্যানসার’ বলে।

অবিচুয়ারিটি লেখার সময় মা-বাবা মৃত্যু প্রসঙ্গে গ্যারেটের কাছে জানতে চাইলে সে জানায়,  মারা যাওয়ার পর সে গরিলা হয়ে বাবার দিকে বিষ্ঠা ছুড়ে মারবে।

মারা যাওয়ার পর নিজের লাশ কীভাবে সৎকার করা হবে, সে ইচ্ছার কথাও জানিয়েছে গ্যারেট। তার মতে, লাশ সৎকার একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। বিশেষ করে কবর দেওয়ার বিষয়টি।

গ্যারেট লিখেছে, ‘আমি চাই আমাকে পুড়িয়ে ফেলা হোক, নর্ডিক দেবতা থরের মা মারা যাওয়ার পর তাঁকে যেভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। পোড়াবার পর আমি একটা গাছ  হতে চাই, যে গাছে গরিলা হয়ে আমিই থাকব।’

‘আমার বয়স যেহেতু পাঁচ বছর, আমি চাই পাঁচটি বাউন্সি হাউস (বাচ্চাদের লাফানোর জন্য স্প্রিং লাগানো রাইড), ব্যাটম্যান আর কোন আইসক্রিম।’

সবার উদ্দেশে রসিকতা করে গ্যারেটের মর্মস্পর্শী অবিচুয়ারির শেষ কথাটি ছিল, ‘আবারও দেখা হবে।’

গত শনিবার গ্যারেটের ইচ্ছা অনুযায়ী তার সৎকার করা হয়। সৎকার অনুষ্ঠান যাতে বেদনাদায়ক না হয়, তাই কার্নিভাল গেমস, ফায়ার ওয়ার্কের ব্যবস্থা করে উৎসবের আমেজ তৈরি করা হয়, যেন সেটি কারো সৎকার নয়, জীবনের উদযাপন।

গ্যারেটের শেষ অনুরোধ অনুযায়ী, বাড়ির পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে ছোট্ট এক নৌকায় ভস্মাবশেষ রেখে তাতে আগুন জ্বালানো তীর ছুড়ে মারেন এক তীরন্দাজ। এভাবেই গ্যারেট ম্যাথিয়াসকে গাছ হয়ে জন্মাবার জন্য শেষ বিদায় জানানো হয়।