ভারতে ৮০ লাখ মানুষ ‘আধুনিক দাস’

Looks like you've blocked notifications!

ভারতে অন্তত ৮০ লাখ মানুষ ‘আধুনিক দাসত্বের’ (মডার্ন স্লেভারি)  শিকার বলে দাবি করেছে বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন’। চলমান সমাজ ব্যবস্থায় বিদ্যমান নতুন দাস পদ্ধতিকে চিহ্নিত করা ও তা অবসানের লক্ষ্যে কাজ করা বিভিন্ন দেশে ‘বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক’ (গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স) নির্ধারণে জরিপ চালায় সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত  প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুসারে ভারতে প্রতি এক হাজার জন মানুষের মধ্যে ৬ দশমিক ১ জন নির্যাতনের শিকার হয়। ১৬৭টি দেশের মধ্যে বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক অনুসারে ভারতের অবস্থান ৫৩ নম্বর বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন অনুসারে এই সূচকের শীর্ষে আছে উত্তর কোরিয়া, যেখানে প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ১০৪ দশমিক ৬ জন আধুনিক দাসত্বের সংজ্ঞা অনুসারে নির্যাতনের শিকার। এদিক থেকে সবচেয়ে নিচে আছে জাপান, সেখানে এক হাজার জনের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক তিনজনকে এ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়।

৫৩ নাম্বারে থাকলেও নির্যাতিত জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত  সবার ওপরে।

ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের মতে, জবরদস্তিমূলক শ্রম, বন্ধকি, জোরপূর্বক বাল্যবিবাহ, দাসত্ব বা তার সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক কাজ ও মানবপাচার এগুলো হলো ‘আধুনিক দাসত্ব’র আওতাভুক্ত।

সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় মানব পাচারবিরোধী বিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট  সরকারি কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদনকে নাকচ করে ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডশনের দেওয়া ‘আধুনিক দাসত্ব’র সংজ্ঞাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির ওপরে চালানো এ জরিপকে ও জরিপকাজে ব্যবহৃত প্রশ্নের ধরনকে তাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ করেন।

ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতেও এ প্রতিবেদন ত্রুটিযুক্ত। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে যেসব ক্ষেত্র নিয়ে ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডশেন জরিপ চালিয়েছে, তা অনেক বড় পরিসরের। ভারতের মতো আর্থসামজিক বাস্তবতার একটি রাষ্ট্রে  ‘জবরদস্তিমূলক শ্রম’ বিষয়টির সংজ্ঞা অনেক বিচিত্র, ও পরিবর্তনশীল। কোনো একটি সমাজের আর্থসামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়ে কেবল উপরিস্তরের জরিপকাজ চালিয়ে দাসত্বের সূচক নির্ধারণ করা চলে না।

যদিও ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘আধুনিক দাসত্ব’ বিষয়টি কোনো আইন অনুসারে সংজ্ঞায়িত না হলেও সাধারণভাবে এর দ্বারা মূলত এমন শোষণ ব্যবস্থাকে নির্দেশ করা হয়, যেখানে কাউকে বিভিন্ন রকম হুমকি, সহিংসতা, বলপ্রয়োগ, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে  তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়।

সর্বশেষ ৪৮টি দেশে চালানো ৫৪টি জরিপে নির্দিষ্ট প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে  একাত্তর হাজার ১৫৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয় বলে জানিয়েছে ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন।

এ প্রতিবেদন বিষয়ে ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জরিপে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, “এত বড় আর  বিচিত্র একটি দেশের জন্য এই সংখ্যা খুব সীমিত। তা ছাড়া আপনি কখনো জোরপূর্বক শ্রমদানে বাধ্য হয়েছেন কি না কিংবা বাল্যবিবাহের জন্য জোরজবরদস্তির শিকার হয়েছেন কি না কেবল ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’র  মাধ্যমে উত্তর গ্রহণ করে এসব ব্যাবারে সিদ্ধান্তে আসা যায় না।”