অবশেষে সন্তানের মরদেহকে বিদায় জানাল মা তিমি

Looks like you've blocked notifications!

টানা ১৭ দিন বয়ে বেড়ানো সন্তানের পচে ওঠা মরদেহকে আর রক্ষা করতে না পেরে অবশেষে চিরবিদায় জানিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের জে-৩৫ নামক অর্কা প্রজাতির সেই অসহায় মা তিমি।

১৭ দিন আগে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের ভিক্টোরিয়া অঞ্চলের নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সদ্য জন্মানো শাবকের মরদেহ বয়ে বেড়ানো ওই তিমিটিকে প্রথম দেখতে পাওয়া যায়, যখন সে কান্নার রোল তুলে আহাজারি করছিল। কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রসংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল অভিমুখে এক হাজার ছয়শ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে ফুরাল তার দীর্ঘ শোকযাত্রা। শাবকের মরদেহটিতে পচন না ধরলে হয়তো এ যাত্রা আরো দীর্ঘ হতো।

ধারণা করা হচ্ছে, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝামাঝি সালিস সাগরে সলিল সমাধি হয়েছে মৃত শাবকটির। গবেষকরা মৃতদেহটি নিয়ে গবেষণা করার কোনো সুযোগ পাবেন না। শাবকটির মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।

কয়েক দিন ধরেই বিশ্ববাসীর মনোযোগ কেড়ে নেয় সন্তানের লাশ নিয়ে বিলাপ করতে থাকা ওই মা তিমি। সন্তান বাৎসল্যের মর্মবিদারী সেই আহাজারি সবাইকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।

জানা যায়, ১৭ দিন আগে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের ভিক্টোরিয়া অঞ্চলের নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় একটি কন্যাশাবক প্রসব করে মা তিমিটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জন্মের পর এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে মারা যায় শাবকটি। তারপর থেকেই সন্তানের লাশ বুকে-পিঠে করে কেঁদে বেড়াতে থাকে তিমিটি। মরদেহ ছেড়ে দিলেই সাগরের অতল গর্ভে চিরতরে হারিয়ে যাবে বলে তিমিটি লাশ ছাড়ছিল না। তখন পর্যন্ত সে প্রস্তুত ছিল না সন্তানকে শেষ বিদায় জানাতে!

কিন্তু দীর্ঘ এ যাত্রায় আস্তে আস্তে মরদেহটি পচতে শুরু করলে অবশেষে মৃত শাবককে পরিত্যাগ করেছে তিমিটি।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলীয় সংস্থার পশ্চিম উপকূল অঞ্চলের কর্মকর্তা মাইকেল মিলস্টেইন জানান, এই মা তিমিটি সম্ভবত বিগত দশকে তার আরো দুটি বাচ্চা মারা যাওয়ার শোক বয়ে বেড়াচ্ছে। এ প্রজাতির তিমিদের দীর্ঘ সময় ধরে শোক করতে দেখা যায় বটে। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় ধরে আহাজারি করার ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের জীববিজ্ঞানী ডেবরা জাইলস ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, অর্কা প্রজাতির তিমি বর্তমানে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে। দিন দিন এদের মধ্যে নবজাতকের মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। এরা বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে। জানা যায়, গত ২০ বছরে নবজাতকের বেঁচে থাকার হার মাত্র ২৫ শতাংশ। বর্তমানে দক্ষিণ সাগরীয় অঞ্চলে এ প্রজাতির তিমি আছে মাত্র ৭৫টি। অবস্থাগতিক এমন যে এরা বিলুপ্তির দিকে চলে যেতে পারে। আর এই তিমিরা সেটা বুঝতেও পারছে। যে মুহূর্তে নিজেদের প্রজাতির সংখ্যা বাড়ানো দরকার, সে মুহূর্তে একটা মেয়ে তিমিকে হারানো ভয়ানক শোকের, যে কি না প্রজননে ভূমিকা রাখতে পারত।

সম্প্রতি তিমির মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার মূল কারণই মানবসৃষ্ট বলে সংশ্লিষ্টদের মতামত। তিমিদের খাবারের বিভিন্ন উৎস নষ্ট করা, বিশেষ করে অতিরিক্ত হারে ‘স্যামন’ মাছ শিকার এদের খাদ্য সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জে-৩৫ মা তিমিটি কানাডার ভ্যানকুভার দ্বীপের  হারো প্রণালীতে মরা শাবক নিয়েই স্যামন মাছের বিশাল একটি ঝাঁককে জোরে তাড়া করেছিল বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া তিমিদের মৃত্যুহার বাড়ার পেছনে অন্য কারণ হিসেবে আছে ব্যাপক হারে পরিবেশ দূষণ, সমুদ্রগামী বিভিন্ন জলযানের বিকট শব্দ ইত্যাদি। পৃথিবীতে শুধু তিমি নয়, আরো অনেক অনেক প্রজাতির প্রাণী কেবল মানবসৃষ্ট দূষণের কারণে আজ বিলুপ্ত হওয়ার মতো হুমকির মুখে পড়েছে।