মিনায় পদদলন : ‘প্রচণ্ড ভিড়ে শ্বাসরোধে হাজিদের মৃত্যু’
সৌদি আরবের মিনা থেকে জামারায় যাওয়ার পথে ভিড়ের চাপ আর অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয়েছে অধিকাংশ হাজির। একটি রাস্তা থেকে অন্য রাস্তার সংযোগস্থলে লাখো মানুষের মিছিল হঠাৎ থেমে যায়; যারা দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন, পেছন থেকে আসা প্রবল চাপ তাঁদের শ্বাসরোধ করে দেয়। এমনটিই বেরিয়ে এসেছে, প্রত্যক্ষদর্শী ও সৌদি আরবের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের অনুসন্ধানে।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, মিনায় পদদলিত হয়ে অন্তত ৭১৭ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন আরো আট শতাধিক হাজির।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা। মিনা থেকে জামারায় পাথর ছোড়ার জন্য লাখো হাজি চলেছেন কাতারে কাতার। ২০৪ নম্বর সড়ক থেকে ২২৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্যে থমকে যায় মিছিল। কিন্তু পেছন থেকে যারা আসছিলেন একই গতিতে, তাঁরা বুঝতে পারেননি এই থেমে যাওয়ার বিষয়টি। প্রবল গতিতে তাঁরা সামনেই অগ্রসর হতে থাকেন। ফলে মাঝখানের ভিড়ে পিষ্ট ও পদদলিত হন শত শত মানুষ। সামনে বা পেছনে যাওয়ার কোনো উপায় নেই তাদের, একমাত্র পরিণতি ছিলো শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যাওয়া।
আহত হয়ে কোনো মতে প্রাণ ফিরে পাওয়াদের মধ্যে মোহাম্মদ নামের একজন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, এ সময় নারী ও বৃদ্ধরা ভিড়ের চাপে মাটিতে শুয়ে পড়েন, কান্নাকাটি শুরু করেন অনেকে। জরুরি সেবা ও নিরাপত্তাকর্মীরা এগিয়ে না এলে ট্র্যাজেডির আকার আরো ভয়াবহ হতে পারতো।
সৌদি আরবের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ এ জন্য কাণ্ডজ্ঞানহীন একদল মানুষকে দায়ী করেছে।
আল জাজিরার সংবাদকর্মী বাসামা আতাস্যি ছিলেন ঘট্নাস্থলের খুব কাছে। তিনি জানিয়েছেন, দুই সাঁড়ি তাবুর মাঝখান দিয়ে যে ২২৪ নম্বর সড়কটি চলে গেছে, মূলত সেখানেই পদদলনের ঘটনাটি ঘটে। তবে সেটি শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোড়ার জায়গা নয় বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
তাৎক্ষণিক ঘটনাটির ভয়াবহতা বুঝতে ব্যর্থ হন আশেপাশের অনেক হাজি। যারা শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের স্থানটির দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এবং ধীরে ধীরে র্মমান্তিক ট্র্যাজেডির চিত্রটি ভেসে ওঠে।
অনেক হাজিই মুঠোফোনে ছবি ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে কিছু ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন। যেখানে দেখা যায়, রাস্তায় নিথর পড়ে রয়েছেন বহু হাজি। পাশে কিছু হুইল চেয়ার, স্ক্র্যাচ এবং পানির বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় হজ কমিটির প্রধান প্রিন্স খালেদ আল ফয়সাল এই দুর্ঘটনার জন্য আফ্রিকানদের দায়ী করেছেন। আল অ্যারাবিয়া টেলিভিশনে এই সংক্রান্ত তাঁর ব্ক্তব্যটি প্রচারিত হয়।
দুর্ঘটনার খুব কাছে থেকেও অক্ষত আছেন, এমন সৌভাগ্যভানদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, কমলা ও হলুদ রঙের পোশাক পরা উদ্ধারকর্মীদের আসতে অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চার হাজারের বেশি উদ্ধারকর্মীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। দুই শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স গেছে আহত ও নিহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দিতে। বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।