নেপালে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ, চ্যানেল বন্ধ
নেপালে তুঙ্গে উঠেছে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ। গতকাল সোমবার ও আজ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর কেন্দ্রস্থলে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন ও দেশটির ছাত্ররা।
বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভের অংশ হিসেবে দেশটির ক্যাবল টিভি অপারেটররা ৪২টি ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। গণমাধ্যমের কাছে অপারেটররা তাদের এই উদ্যোগকে অভিহিত করেছে ‘ভালোর জন্য অবরোধ’ নামে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্যাবল টিভি অপারেটরদের সংগঠনের সভাপতি সুশীল পারজুলি জানিয়েছেন, সাময়িকভাবে এই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করতে চাপ আসছিল বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি নেপালে ভারতের তেল সরবরাহ বন্ধ করা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। গত সপ্তাহ থেকে ভারতের তেলের ট্রাকগুলো নেপালে যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে ভারত জানিয়েছে, ‘রাস্তা বন্ধ’ থাকায় যেতে পারছে না তেলের ট্রাক। ফলে দেশটিতে তেল সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং তেল ব্যবহারে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছে দেশটি। কাঠমান্ডুর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ‘ভারতের অবরোধের’ ফলে দেশটিতে খাদ্য সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর থেকে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। নতুন সংবিধানে দেশটিকে ফেডারেল কাঠামোর আওতায় আনার ফলে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সংখ্যালঘুরা বৈষম্যের আশঙ্কা করছেন। আর ভারতীয় সীমান্তের সংখ্যালঘুরা আপত্তি করা সত্ত্বেও নতুন সংবিধান গ্রহণে তাড়াহুড়া করায় নেপালের সমালোচনা করছে ভারত।
বিবিসি জানিয়েছে, নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে গত আগস্ট থেকে বিক্ষোভ চলছে এবং এতে পুলিশসহ ৫০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব বিক্ষোভের ফলে ভারতীয় তেল ট্রাকগুলো সীমান্ত পার হচ্ছে না এবং এতে কর্তৃপক্ষ তেল সাশ্রয়ের জন্য গাড়ির ব্যবহার সীমিত রাখার চেষ্টা করছে।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নেপালিদের অভিযোগ, ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্রটি ‘বাণিজ্য অবরোধ’ আরোপ করেছে। এ ছাড়া নতুন সংবিধান গ্রহণ করার ব্যাপারে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, ভারত নেপালের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। টাইমস অব ইন্ডিয়ার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বিক্ষোভের কারণে নেপালের সীমান্তবর্তী রাস্তাগুলো বন্ধ থাকায় ট্রাক নেপালে যেতে পারছে না।
আজ কাঠমান্ডুর কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভের সময় ছাত্রদের হাতে ছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল এবং তারা ‘ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ নিপাত যাক’ ‘নরেন্দ্র মোদি নিপাত যাক’ বলে স্লোগান দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং মোদির কুশপুতুল ছিনিয়ে নেয়।
এরপর স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় প্রায় তিন হাজার ছাত্রের একটি বিক্ষোভ মিছিল কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতাবাসের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ওই মিছিল থেকে ‘সীমান্ত খুলে দাও এবং নেপালের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বন্ধ করো’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়।
আজ নেপাল সরকারের পরিবহনমন্ত্রী সুধাল কৈরালা উদ্ভূত সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে পণ্য পরিবহনের জন্য চীনের সঙ্গে দুটি সীমান্তপথ খুলে দিতে চীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। চলতি বছরের দুটি মারাত্মক ভূমিকম্প হিমালয়ের পাদদেশের দেশটিতে আঘাত হানার পর ওই সীমান্তপথ দুটি বন্ধ করে দিয়েছিল চীন। আর এর ফলে জ্বালানি তেলের জন্য প্রায় সম্পূর্ণ ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে নেপাল।