তিনদিনের মাথায় সত্যাগ্রহ ধরনা তুলে নিলেন মমতা
কলকাতার মেট্রো চ্যানেলের সত্যাগ্রহ ধরনা প্রত্যাহার করে নিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধরনা শুরুর তিনদিনের মাথায় তিনি তা তুলে নিলেন।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে পাশে নিয়ে ধরনা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা দিলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, মহাজোটের অনুরোধ মেনেই তিনদিনের মাথায় সত্যাগ্রহ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। ভারতের গণতন্ত্রকে বাঁচানোর লক্ষ্যে ছিল এই ধরনা। এই ধরনা কোনোভাবেই রাজনৈতিক ধরনা ছিল না। এই ধরনা ছিল ভারতকে রক্ষার উদ্দেশে। সেভ ইন্ডিয়া ব্যানারে এই ধরনা ছিল আইপিএস ও আইএএসদের সম্মান রক্ষার জন্য।
মমতা বলেন, সব বিরোধীরা সমর্থন জানিয়েছেন এই ধরনায়। বহু সরকারি সংগঠন, সোশ্যাল ওয়ালফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এই ধরনাকে সমর্থন জানিয়েছেন। পাশে থাকার জন্য ধরনা প্রত্যাহারের মুহূর্তে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। একইসঙ্গে, পরবর্তী কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেন মমতা।
মমতা জানান, ১৩ বা ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে বিরোধীদের সভা হবে। তার পরই স্থির হবে পরবর্তী কর্মসূচি। সেই সঙ্গে সত্যাগ্রহ মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, মোদির এক নায়কতন্ত্রের প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তিনি। আগামী ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ধরনা কর্মসূচি করবেন তিনি। সেই ধরনায় সামিল হবেন মহাজোটের সব রাজনৈতিক দল।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা সাফ জানিয়ে দেন, মোদিকে পদ থেকে হঠাতেই হবে। দেশে গণতন্ত্র নয়, একনায়কতন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একজোট হওয়ার বার্তা দিয়ে দিল্লির মঞ্চ থেকে মোদিবিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার করার ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত রোববার সন্ধ্যায় চিটফান্ড তদন্তে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে জেরা করতে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেই সময় সিবিআইয়ের সদস্যদের বাধা দেয় কলকাতা পুলিশ। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। যার জেরে সিবিআই কর্মকর্তাদের আটক করে কলকাতা পুলিশ। তার পরই ঘটনাস্থলে এসে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিহিংসাপরায়ণতা নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআইকে লেলিয়ে দিচ্ছে।
সেই ঘটনার প্রতিবাদে রোববার রাত ৮টা ৪০ মিনিট থেকে কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে নেতা ও সমর্থকদের নিয়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন মমতা। আজ সন্ধ্যায় অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে পাশে নিয়ে ধরনা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা দেন তিনি।
কলকাতা পুলিশের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সিবিআইর সামনে হাজিরা দিতে হবে। কিন্তু তাঁকে আপাতত গ্রেপ্তার করা যাবে না। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২০ ফেব্রুয়ারি। সেদিন হাজিরা দিতে হবে রাজীব কুমারকে। নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে সিবিআই দপ্তরে রাজীব কুমারকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শোনার পরে দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সত্যাগ্রহ মঞ্চ’ থেকে বলেন, ‘এটা আমাদের নৈতিক জয়। এটা মানুষের জয়। আইনের জয়।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে মমতা বলেন, ‘আমরা কখনই বলিনি অসহযোগিতা করব। আমরা তদন্তকারীদের পূর্ণ সহযোগিতার পক্ষে। রাজীব কুমার সব সময় বলেছিলেন, তিনি কোনো নিরপেক্ষ স্থানে বসে কথা বলতে চান। তোমাদের যদি কোনো জিজ্ঞাস্য থাকে, সেখানেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করো। তা না করে ওরা কোনো নোটিশ ছাড়া গোপনে রাজীব কুমারের বাড়িতে চলে গেল।’
‘অথচ সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে বলে দিয়েছেন, এখনই গ্রেপ্তার নয়। কোনো আদালত অবমাননা হয়নি। আমরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা কোনো সিবিআই অফিসারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এটা যা হয়েছে, তা কেন্দ্রের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি শুধু রাজীব কুমারের জন্য ধরনা দিচ্ছি না। দেশের সব অফিসারের জন্য দিচ্ছি। এই জয় সংবিধানের। এই জয় জোটের। এই জয় সারা দেশের, জনতার। সংবিধান বাঁচাও আন্দোলনের।’
তবে এবারে সত্যাগ্রহের সমাপ্তি ঘটবে কি না, সে প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাঁর দলের নেতা এবং দেশের অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।