ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলা

খুনি ব্রেন্টন অনলাইনে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনে

Looks like you've blocked notifications!

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি পার্ক এলাকায় দুই মসজিদে হামলাকারী সন্দেহভাজন বন্দুকধারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট তিন মাসের ব্যবধানে একটি অস্ত্রের দোকান থেকে অনলাইনে চারটি অস্ত্র কিনেছিল।

ক্রাইস্টচার্চ শহরের ‘গান সিটি’ নামে দোকানের স্বত্বাধিকারী ডেভিড টিপল বলেন, ‘সন্দেহভাজন ব্রেন্টন ২০১৭ সালের ডিসেম্বর ও ২০১৮ সালের মার্চ মাসে অনলাইনে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি-বারুদ কিনেছিল।’

ডেভিড টিপল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বলে মার্কিন বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় তিনি আরো বলেন, তবে ওই দিন ঘটনার সময় যে আধা-স্বয়ংক্রিয় (সেমি-অটোমেটিক) অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, সেটি তাঁর দোকান থেকে কেনা হয়নি।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় কালো কাপড় ও হেলমেট পরা এক বন্দুকধারী ক্রাইস্টচার্চ শহরে হ্যাগিল পার্ক এলাকায় আল নুর মসজিদে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে শুরু করে। এতে সর্বশেষ ৫০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে চারজন বাংলাদেশি রয়েছেন। এ সময় শহরের আরো একটি মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় অনলাইনে সরাসরি হামলার ভিডিওচিত্র সম্প্রচারকারী এক বন্দুকধারীর নাম ব্রেন্টন ট্যারান্ট। ২৮ বছর বয়সী এই যুবকের মাথায় ক্যামেরা লাগানো ছিল। ব্রেন্টন জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। সে দেশটির উত্তরাঞ্চলের গ্রাফটন শহরের বাসিন্দা। হামলার আগে অনলাইনে পোস্ট করা ৭৩ পৃষ্ঠার এক ইশতেহারে সে হামলার কারণ বর্ণনা করেছে।

সেখানে ব্রেন্টন নিজেকে একজন সাধারণ শ্বেতাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দেয়। মূলত শ্বেতাঙ্গদের ভূখণ্ড কখনোই অনুপ্রবেশকারীদের হবে না, এটা বুঝিয়ে দিতেই ওই হামলা চালানো হয় বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এরই মধ্যে ব্রেন্টনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আদালত ব্রেন্টন ট্যারান্টের জামিনবিহীন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এতে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ ব্রেন্টনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। ওই দিন তাকে সাউথ আইল্যান্ড সিটি হাইকোর্টে তোলা হবে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, ‘হামলার প্রধান সন্দেহভাজন একজন নিবন্ধিত আগ্নেয়াস্ত্রধারী। সে তাণ্ডব চালানোর সময় পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে দুটি আধা-স্বয়ংক্রিয় (সেমি-অ্যাটোমেটিক) ও দুটি শটগান ছিল।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশটির বেসামরিক মানুষের কাছে ১৫ লাখ নিবন্ধিত আগ্নেয়াস্ত্র আছে, যার মধ্যে ১৫ হাজার নিবন্ধিত আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল।

‘গান সিটি’র স্বত্বাধিকারী ডেভিড টিপল ক্রাইস্টচার্চের ওই সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, “মিলিটারি-স্টাইল স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এমএসএসএ যেটি ঘটনাস্থলে বন্দুকধারী ব্যবহার করেছে, সেটি ‘গান সিটি’ থেকে কেনা হয়নি। গান সিটি কোনো এমএসএসএ তার কাছে বিক্রি করেনি, শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির অস্ত্র বিক্রি করেছে।’’

নিউজিল্যান্ডে অস্ত্র আইন অনুযায়ী, ‘এ’ ক্যাটাগরির অস্ত্র আধা-স্বয়ংক্রিয় হতে পারে, কিন্তু সেটি সাতটি গুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি মসজিদের বন্দুকধারী যে আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি ব্যবহার করেছে, তাতে বড় ধরনের ম্যাগাজিন ছিল।

যখন কেউ অনলাইনে অস্ত্র কিনতে চায়, তখন বিক্রেতা কেবল পুলিশের যাচাই করা অনলাইন মেইল-অর্ডারের প্রক্রিয়াটি দেখতে চায় বলেও জানান ‘গান সিটি’র মালিক।

ডেভিড টিপল বলেন, ‘আমরা ক্রেতার কাছে বেশি কিছু জানতে চাই না। তিনি ছিলেন একজন নতুন ক্রেতা, যার নিজের নতুন একটা লাইসেন্স আছে।’

‘গান সিটি’র মালিক মনে করেন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন হামলার ঘটনার পর অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা সঠিক।