‘নিউজিল্যান্ড আপনার মতো শোকাহত, আমরা সবাই এক’
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি পার্কের কাছে গত শুক্রবারে হামলা হওয়া আল নুর মসজিদ প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছিলেন ২০ হাজার মানুষ। আর এই হাজারো মানুষের সামনে শোকাহত মুসলিমদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ‘আমরা সবাই এক।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজ শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার এক সপ্তাহের মাথায় নিহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিউজিল্যান্ডে দুই মিনিট নীরবতা পালন ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ২০ হাজারের অধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় আল নুর মসজিদে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজ, দুই মিনিট নীরবতা পালন ও প্রার্থনা, প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডার আবেগঘন বক্তব্যসহ সব আনুষ্ঠানিকতাই নিউজিল্যান্ডের রেডিও ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
সেখানে কালো কাপড় দিয়ে উন্মুক্ত স্থানে তৈরি করা হয় মঞ্চ। নিচে বসেছিলেন হাজারো নারী-পুরুষ। সেখানেই জুমার আজান দেন মুয়াজিন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসেন কালো সোয়েটার আর মাথায় কালো স্কার্ফ পরে। অনুষ্ঠানে নারী নিরাপত্তাকর্মীরাও মাথায় কালো স্কার্ফ পরেন আর তাদের পোশাকে গোঁজা ছিল লাল গোলাপ।
এ সময় হাজারো মানুষের সমাবেশে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারের উদ্দেশে বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড আপনার মতোই শোকাহত, আমরা সবাই এক।’
এই প্রার্থনা সভা পরিচালনা করেন আল নুর মসজিদের ইমাম জামাল ফৌদা। সেখানে ২০ মিনিটের এক শক্তিশালী বক্তব্যে ইমাম ফৌদা বলেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে, কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি, একত্র আছি। কেউ আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারবে না, এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
‘এখানে আমরা শত শত, হাজার হাজার মানুষ একটি মাত্র উদ্দেশ্য নিয়েই একত্র হয়েছি যে আমরা ঘৃণা থেকে বেরিয়ে আসব এবং ভালোবাসাই আমাদেরকে মুক্তি দেবে।… আমাদের পরিবারের প্রাণপ্রিয় মানুষদের মৃত্যু নিরর্থক নয়। তাদের রক্ত আমাদের আশার বীজে পানির মতো,’ যোগ করেন ইমাম।
ইমাম ফৌদা আরো বলেন, ‘ইসলামোফোবিয়া একটি বাস্তব বিষয়। এটির মাধ্যমে মানুষকে অযৌক্তিকভাবে মুসলমানদের ব্যাপারে ভয় দেখানো হয়। ভয় দেখানো হয় আমাদের পোশাক-পরিচ্ছেদ নিয়ে, ভয় দেখনো হয় আমাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে, ভয় দেখানো হয় আমাদের প্রার্থনার ব্যাপারে, ভয় দেখানো হয় আমাদের বিশ্বাস নিয়েও।’
এ সময় মসজিদসহ অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা। অনেকে ঘটনাস্থলে না এসে স্কুল, ক্যাফে, অফিস বা বাড়িতে বসেও প্রার্থনা ও নীরবতায় অংশ নিয়েছেন।
নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী হাজারো মুসলিম নারীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে অনেক কিউই নারী এই দিনও মাথায় বেঁধেছিলেন স্কার্ফ। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডজুড়ে বিভিন্ন মসজিদ এই দিন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এরই মধ্যে টুইটারে সাড়া ফেলেছে স্থানীয় নাগরিকদের হ্যাশট্যাগ হেড স্কার্ফ ফর হারমনি নামের একটি প্রচারাভিযান।
হ্যাগলি পার্কে বন্ধুদের সঙ্গে মাথায় স্কার্ফ পরা রবিন মলোনি (৬৫) বলেন, ‘আমরা আমাদের ভালোবাসা, সমর্থন ও সংহতি প্রদর্শনের জন্য মাথায় স্কার্ফ পরেছি। আশা করি, আমরা সবাই এই কাজের মাধ্যমে মুসলিম নারীদের প্রদর্শন করতে পারব যে তারা সবাই আমাদেরই একজন।’
বিবিসি জানায়, সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনগণের কাছে বিক্রি করা সামরিক ধাঁচের অস্ত্র ফিরিয়ে নিতে দুইশ মিলিয়ন ডলার খরচ করবে নিউজিল্যান্ড সরকার।