ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ভোটগ্রহণের সময় সংঘর্ষ, নিহত ২

Looks like you've blocked notifications!
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময় সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার থেকে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

প্রথম দফা ভোটগ্রহণের দিনই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল।

অন্ধ্রপ্রদেশের ভিরামপুর এলাকায় তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও ইউথ লেবার অ্যান্ড ফার্মার কংগ্রেস পার্টির (ওয়াইএসআর কংগ্রেস) সংঘর্ষে ওই ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, টিডিপি পার্টির সমর্থক চিন্তা ভাস্কর ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সমর্থক পুল্লা রেড্ডি।

জানা গেছে, ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে ভিরামপুর গ্রামের ১৯৭ নম্বর বুথের সামনে টিডিপি ও ওয়াইএসআরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন টিডিপি পার্টির সমর্থক চিন্তা ভাস্কর ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সমর্থক পুল্লা রেড্ডি।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের ভোট ঘিরে বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের রসমন্ডা স্কুলে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিজেপির এক কর্মীর মাথা ফেটে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

গতকাল বুধবার রাতেই ভোটকে ঘিরে কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত প্রধানের ওপর হামলা হয়। এর জের ধরে আজ সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।

তবে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ চলছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ারের বেশ কয়েকটি বুথে ও কোচবিহারের বক্সিরহাটে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া কোচবিহারের গীতালদহে বিজেপি এজেন্টকে বুথ থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক বলেন, ‘কোচবিহারের দিনহাটার একাধিক বুথ থেকে বিজেপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে তৃণমূল। এমনকি গায়ে সেনা জওয়ানের মতো জলপাই রঙের ডোরাকাটা জামা ও মাথার টুপিতে ইন্ডিয়ান আর্মি লেখা পোশাকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের এক কর্মীকে ডিউটি করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া কেন্দ্রে।’

এ ছাড়া কোচবিহারের বলরামপুরে বিজেপির পাথর হামলায় পুলিশকর্মী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।  ভোটগ্রহণ শুরুর পর পরই পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, ‘ভোটগ্রহণ  শুরুর পরই একের পর এক ইভিএম মেশিন বিকল হতে শুরু করেছে।’

রবীন্দ্রনাথ ঘোষ আরো অভিযোগ করেন, ইভিএমের মাধ্যমে কারচুপি করছে বিজেপি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনী ও সীমান্ত থেকে আসা বিএসএফের জওয়ানরা বুথের মধ্যে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সবমিলিয়ে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার অভিযোগ উঠলেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট চলছে শান্তিপূর্ণভাবেই। আজ  সকাল থেকেই বিভিন্ন বুথে বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়েছে।

আজ  সকাল থেকে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের ২৫টি লোকসভা আসনেও শুরু হয় ভোটগ্রহণ। সেখানে লোকসভার পাশাপাশি চলছে বিধানসভা নির্বাচনও।

ভারতে প্রথম দফার এই ভোটে ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে নীতিন গড়করি, কিরেন রিজেজু থেকে শুরু করে ভি কে সিংদের।

২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য ভাগ হয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় ভোট। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রায় চার কোটি ভোটার ১৭৫টি বিধানসভা ও ২৫টি লোকসভার কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন। ভোটের ময়দানে আছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু থেকে শুরু করে জগনমোহন রেড্ডিরা।

অন্যদিকে ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও ভোট চলছে আজ। মোট আটটি আসনে চলছে ভোটগ্রহণ। মুজফফরনগর থেকে ভোটে লড়ছেন আরএলডির প্রধান অজিত সিং।

মহারাষ্ট্রে ভোট চলছে সাতটি আসনে। বিহারে চারটি আসনেও চলছে ভোট। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ পাসোয়ান।

অরুণাচল প্রদেশের দুটি ও অসমের পাঁচটি আসনে চলছে ভোট। অসমে কিরেণ রিজিজুর পাশাপাশি সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের ছেলে গৌরব গগৈয়ের কেন্দ্রেও আজ ভোট চলছে। ছত্তিশড়ের বস্তার কেন্দ্রেও আজ ভোট। মাত্র দুই দিন আগে মাওবাদীদের হানায় বিজেপি বিধায়কসহ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে এই এলাকায়।

উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরপুর লোকসভা কেন্দ্রে অনেক জাল ভোট পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি প্রার্থী সঞ্জীব বালিয়ান। ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাল ভোটের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘যেসব নারীরা বোরকা পরে ভোট দিতে আসছেন, তাদের পরীক্ষা করে দেখা দরকার।’ বোরকার আড়ালে অনেক জাল ভোট দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাপ্রবণ মুজাফফরনগর কেন্দ্রে এবার মূল লড়াই রাষ্ট্রীয় লোকদল ও বিজেপির মধ্যে। এই কেন্দ্রে রয়েছেন ১৬ লাখ ভোটার। যার মধ্যে পাঁচ লাখ ভোটার মুসলমান।

২০১৩ সালে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয় মুজাফফরনগরে। এই সংঘর্ষে ৬০ জনের মৃত্যু হয়। ৫০ হাজার মানুষ বাড়িছাড়া হন। ওই ঘটনার ছয় মাস পর লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন সঞ্জীব বালিয়ান। 

ভারতে আজ থেকে শুরু হয়েছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। মোট ১৮টি রাজ্যের ৯১টি কেন্দ্রে চলছে ভোটগ্রহণ। ভোট হচ্ছে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলেও। একই সঙ্গে চারটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেবেন দেশটির প্রায় ৯০ কোটি ভোটার। গতবারের চেয়ে এবার ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।