সৌদি যা বলেছে মিনায় নিহত তার তিন গুণ!
চলতি বছর হজের সময় মিনায় পদদলিত হয়ে কমপক্ষে দুই হাজার ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার হজে মৃত্যুর তথ্য নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। এপির সংখ্যা সৌদি আরব ঘোষিত মৃতের সংখ্যার তিন গুণ। সর্বশেষ ৯৩৪ জনের মৃত্যুর কথা বলেছে সৌদি আরব।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ফিরে আসা হাজিদের দেওয়া তথ্যঅনুযায়ী, মিনার দুর্ঘটনার আগে মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যাও সৌদি সরকারের প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে তিন গুণ বেশি। তবে, সৌদি সরকার তাদের পূর্ববর্তী সংখ্যা পরিবর্তন করেনি। আর ২৪ সেপ্টেম্বর মিনায় পদদলিত হওয়ার ঘটনার দুইদিন পর দেশটির পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় জানানো হয়, এ ঘটনায় ৭৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরো ৯৩৪ জন। পরে এর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
গত সোমবার রাতে এপির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগে রোববার সৌদি সরকার মিনার ঘটনা নিয়ে এক বৈঠক করে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির ক্রাউন প্রিন্স ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন নাইফ বিন আবদুল আজিজ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে মিনায় পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সৌদি আরবে হজ করতে আসে এমন ১৮০টির বেশি দেশের মধ্যে থেকে ৩০টি দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য থেকে মিনায় পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা হিসাব করেছে এপি। ইরানের দাবি তাদের ৪৬৫ জন হাজি মারা গেছেন। মালির ২৫৪, নাইজেরিয়ার ১৯৯, ক্যামেরুন ৭৬, নাইজারের ৭২, সেনেগালের ৬১, আইভোরি কোস্ট ও বেনিনের ৫২ জন হাজির মৃত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দেশ দাবি করেছে। হজে মৃত্যু হয়েছে এমন দাবি করা অপর দেশগুলোর মধ্যে আছে, মিসর ১৮২, বাংলাদেশ ১৩৭, ইন্দোনেশিয়া ১২৬, ভারত ১১৬, পাকিস্তান ১০২, ইথিওপিয়া ৪৭, শাদ ৪৩, মরক্কো ৩৬, আলজেরিয়া ৩৩, সুদান ৩০, বুরকিনা ফ্যাসো ২২, তানজানিয়া ২০, সোমলিয়া ১০, কেনিয়া ৮, ঘানা ও তুরস্ক ৭, মিয়ানমার ও লিবিয়া ৬, চীন ৪, আফগানিস্তান ২, জর্ডান ও মালয়েশিয়া ১।
এপির প্রতিবেদনে অনুযায়ী, গত ২৪ সেপ্টেম্বর মক্কার মিনার দুর্ঘটনার পর থেকেই মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে মৃতদেহ শনাক্তের পক্রিয়া চলছে। এখনো কয়েকশ হাজি নিখোঁজ রয়েছেন।
সৌদি বাদশাহ সালমান এবার হজের সময় ক্রেন দুর্ঘটনা ও পরে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। চলতি বছর ক্ষমতায় আসার পর এটিই সালমানের আমলের প্রথম হজ।
হজের সময় মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনা ও পদদলিত হয়ে মৃত্যুর জন্য বরাবরই সৌদি রাজবংশের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে আসছে ইরান। একই সঙ্গে তারা এসব দুর্ঘটনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা লুকোনো হয়েছে দাবি করে সৌদি সরকারের নিন্দা জানিয়েছে। ইরানের দাবি অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৭০০ জন। তবে এই দাবির পক্ষে তারা যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। আর, সৌদি আরবের ঘটনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা সরকারগুলোর নিশ্চুপ দাবি করে এর নিন্দা জানিয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
এর আগে ১৯৯০ সালে হজে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে, যেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪২৬ জন।