২৭ বছর পর কোমা থেকে ফিরলেন নারী

Looks like you've blocked notifications!

সাতাশ বছর আগে আরব আমিরাতে এক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল মুনিরা আবদুল্লাহর স্বাভাবিক জীবন। মস্তিষ্কের আঘাত পেয়ে চলে যান কোমায়। এই দীর্ঘ সময়ে পৃথিবীতে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা, পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুরই। কিছুই জানেন না মুনিরা। কিন্তু এত বছর অজ্ঞান থাকার পর হঠাৎ করেই সংজ্ঞা ফিরেছে তাঁর।

গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

২৭ বছর আগে ওই দুর্ঘটনার সময় মুনিরার বয়স ছিল ৩২ বছর। ছেলেকে স্কুল থেকে গাড়িতে করে ফিরছিলেন তিনি। পথে একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পান মুনিরা। তাঁর ছেলে চার বছর বয়সী ওমর ওয়েবার পাশেই বসে ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় মুনিরা তাঁর ছেলে ওমরকে বাঁচাতে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আর সে জন্য বেঁচে যায় ওমর।

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম দি ন্যাশনালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনা ও মায়ের অবস্থার উন্নতির কথা জানান ওমর ওয়েবার।

ওমর বলেন, ‘আমি কখনোই তাঁর ব্যাপারে আশা ছাড়িনি। কারণ আমার সব সময় মনে হতো, একদিন তিনি জেগে উঠবেন।’

ওমর আরো বলেন, ‘আমি এই গল্পটি সবার কাছে তুলে ধরছি। কারণ, আমি মানুষকে বলতে চাই, কেউ যেন তাঁর প্রিয়জনের ব্যাপারে আশা ছেড়ে না দেন। এ রকম পরিস্থিতিতে কেউ যেন তাঁদের মৃত না ভাবেন।’

ওমর বলেন, ‘আমার মা আমার সঙ্গে পেছনের সিটে বসে ছিলেন। যখন তিনি দেখেন যে দুর্ঘটনা ঘটছে, তিনি আমাকে রক্ষা করার জন্য জড়িয়ে ধরেন।’

এরপর স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মুনিরা আবদুল্লাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে। সেখানে মুনিরার অবস্থাকে ‘ভেজিটেটিভ’ বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা। তার মানে, তিনি ব্যথা অনুভব করবেন, কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারবেন না।

এরপর মনিরাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল-আইন শহরে নিয়ে আসা হয়, যেখানে তিনি বাস করতেন। সেখান থেকেই তাঁকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। বেশ কয়েক বছর সেখানে ছিলেন তিনি। টিউবের মাধ্যমে খাবার খাইয়ে তাঁকে জীবিত রাখা হচ্ছিল।

এরপর ২০১৭ সালে সরকারি অনুদানের অর্থে মুনিরাকে জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এ ছাড়া তাঁর অবস্থার উন্নতির জন্য এবং তাঁকে জাগিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।

একদিন হাসপাতালের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ওমর। তখন হঠাৎ করেই জেগে ওঠেন তাঁর মা মুনিরা।

ওমর বলেন, ‘হাসপাতালে একটি ভুল বোঝাবুঝির অবস্থা হয়েছিল। আমার মা ভেবেছিলেন, আমি হয়তো কোনো ঝুঁকির মধ্যে আছি। তিনি অদ্ভুত শব্দ করছিলেন। আর আমি ডাক্তারদের ডাকছিলাম তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য। তাঁরা বলেন, সবকিছু স্বাভাবিকই আছে।’

ওমর বলেন, ‘এর কিছুদিন পর কারো ডাকে আমি জেগে উঠি। আমার মা আমার নাম ধরে ডাকছিলেন। আমি আনন্দে উড়ছিলাম। অনেক বছর এই মুহূর্তটি পাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখছিলাম আমি। আমার নাম ধরে ডাকাই ছিল তাঁর প্রথম শব্দ।’

মুনিরা এখন আরো সাড়া দিচ্ছেন। তিনি সামান্য কথোপকথনও করতে পারেন। তাঁকে এখন আবুধাবিতে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে তাঁকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে।

এভাবে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে তা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। এ রকম পরিস্থিতি থেকে কে কখন জ্ঞান ফিরে পাবেন, এ বিষয়ে অনুমান করাও অনেক কঠিন।