পশ্চিমবঙ্গে ভোটে অশান্তি, বাবুল সুপ্রিয়র গাড়ি ভাঙচুর

Looks like you've blocked notifications!

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে তীব্র অশান্তি ছড়াল পশ্চিমবঙ্গে। এদিন পশ্চিমবঙ্গের আটটি লোকসভা কেন্দ্রে চলছে ভোট গ্রহণ। তবে এর মধ্যে বীরভূম ও আসানসোল কেন্দ্র থেকেই বেশি অশান্তির খবর আসছে। এসবের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

আজ সোমবার সকাল ৭টা থেকে এই ভোট শুরু হয়েছে। এদিন সকালে বীরভূমের নানুরে ভোটদানে ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তৃণমূল ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিচ্ছে—এ খবর চাউর হতেই লাঠি হাতে বেরিয়ে আসেন গ্রামের নারীরা। ভোটকেন্দ্রের কাছে তৃণমূলের অস্থায়ী শিবিরে চালানো হয় ভাঙচুর। এমনকি গ্রামে ঢুকে তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতেও চড়াও হন গ্রামের নারীরা।

নানুরের ২১৭ নম্বর বুথে ভোট দিতে যাওয়ার সময় এক বিজেপি সমর্থককে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতকারীরা মারধর করার অভিযোগ ওঠে। তার পরেই গ্রাম থেকে বাঁশ ও লাঠি হাতে নিয়ে নারীরা ছুটে আসেন। তৃণমূলের অস্থায়ী কার্যালয়ে রান্নাবান্না হচ্ছিল, সেই রান্নার আয়োজন ভেস্তে দেন। রান্নার চাল, ডালের বস্তা ও গ্যাসের ওভেন ছুড়ে ফেলে দেন পাশের পুকুরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ বাহিনী। ঘটনার জেরে ওই এলাকায় আতঙ্কে রয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা।

অন্যদিকে, এদিন সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পরেই আসানসোলের বারাবনির একটি বুথে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন আসানসোল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। এমনকি তাঁর গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযোগের তীর উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

এদিন সকালে বারাবনি এলাকার বুথে বিজেপির এজেন্টদের বসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে—এ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান বাবুল সুপ্রিয়। বুথে ঢুকে তাঁর সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদ হয় পোলিং অফিসারের সঙ্গে। এরপর বাবুল বুথ থেকে বের হতেই তৃণমূলের কর্মীরা বাবুলকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেইসঙ্গে বাবুলের গাড়ির কাচও ভেঙে দেওয়া হয়।

তৃণমূলের অভিযোগ, বাবুল সুপ্রিয়র নেতৃত্বে বিজেপির কর্মীরা তৃণমূল কর্মীদের মারধর করেছে। যদিও বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘আমি জানতাম, প্রথম যেখানে যাব, সেখানেই গণ্ডগোল করবে তৃণমূল। ওরা আমাকে আটকাতে চাইছে। কিন্তু সেটা পারবে না।’

পাশাপাশি বীরভূমের নলহাটির হাবিসপুরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, তৃণমূল এই কেন্দ্রে বিজেপি কর্মীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিল।  এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটে যায় বলেও অভিযোগ ওঠে। ঘটনাকে কেন্দ্রে করে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের লাঠি কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পুলিশকে লাঠিপেটা করতে হয়।

অন্যদিকে, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের জেমুয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ দেখান ভোটাররা। বীরভূমের কেতুগ্রামের খাজি হাইস্কুলে ভোটে ছাপ্পাদানে মদদ দেওয়ার অভিযোগে কমিশন সরিয়ে দেয় প্রিসাইডিং অফিসারকে।

বীরভূমের ল বাগানে ভোটারদের ভোটদানে বাধা ও ভোটারদের ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, স্থানীয় গ্রামবাসীকে প্রথমে এলাকার তৃণমূল পার্টি অফিসে নিয়ে গিয়ে সেখানে তাদের ভোটার কার্ড আটকে রেখে চা খেতে দেওয়া হয়। তারপর তাদের ভোট না দিতে যাওয়ার জন্য বলা হয়। এর পরেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য পুলিশের সহযোগিতায় ওই ভোটাররা ভোটদান করেন।

রাজ্যের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী ঘটনাস্থলে এলে তাঁকে তৃণমূলকর্মীরা গালাগাল করে বলেও অভিযোগ। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ছাপ্পা ভোট, ভোটদানে বাধা, ভুয়া ভোটারের মাধ্যমে ভোটদানের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে।

রাজ্যের বীরভূম ও আসানসোল কেন্দ্রে চরম উত্তেজনার মধ্যেই চলছে ভোট গ্রহণ। এদিন পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর ও বীরভূম কেন্দ্রে চলছে ভোট গ্রহণ।