বাল্যবিবাহ বন্ধে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ : এইচআরডব্লিউ
লন্ডনের গার্ল সামিটে অঙ্গীকার করলেও বাল্যবিবাহ বন্ধে বাংলাদেশ সরকার পিছিয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্থানীয় সময় বুধবার এইচআরডব্লিউর নারী অধিকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক হেদার বারের এক প্রতিবেদনে এ অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গার্ল সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে আর ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে শিশুদের বিয়ে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে ২৯ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হচ্ছে। তাই শেখ হাসিনার অঙ্গীকারকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বিশ্বে এই হার সর্বোচ্চ। ১৮ বছরের মধ্যে ৬৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। ভয়ানক তথ্য হলো, ১১ বছরের মধ্যে ২ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হয়। হেদার বলেন, ‘এইচআরডব্লিউ বাংলাদেশে যখন বাল্যবিবাহ বন্ধে গবেষণা করছিল, তখন আমি ১০ বছর বয়সী শিশু কনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিন্তু এই অঙ্গীকারের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকার বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার প্রস্তাব করেছে। মানবাধিকারকর্মী এবং আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর প্রতিবাদের পর সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে নিশ্চয়তা দিয়েছে, মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানো হবে না। কিন্তু গোপনে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ের অনুমতির জন্য একটি প্রস্তাব নিয়ে এগোচ্ছে।
সাম্প্রতিক খবর হলো, এ আইনের খসড়া প্রস্তাবটি পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই খসড়া প্রস্তাবে একটি ধারা রয়েছে, যেখানে অসংজ্ঞায়িত ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ বছরের নিচে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এক মাস আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাবা-মা অথবা আদালতের সম্মতিতে ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে।
হেদার বার তাঁর প্রতিবেদনে বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধের এটি কোনো পথ নয়। এ দেশে মা-বাবারাই ১৬ বছর বয়সে তাঁদের মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করে থাকেন। এর মানে দাঁড়ায়, এখানে নারীর বিয়ের বয়স কার্যত ১৬ বছর হয়ে গেল। অনেক পরিবারই এখন ভাবছে, ১৬ বছরের কম বয়সে বিয়ে সরকার ক্ষমা করে দেবে। অনেক বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মী, বাবা-মা, শিশু, নেতা এবং স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ কমাতে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁদের এই প্রচেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর কলমের এক খোঁচায় বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।