যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আয় এক হাজার কোটি টাকার ওপরে, যা ২০১৮ সালের মধ্যে চার হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। অন্যদিকে, দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই পেশায় আগ্রহ বাড়ছে।
তথ্যপ্রযুক্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন এমন কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভালো বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেও তাদের ভালো আয়ের সুযোগ হচ্ছিল না। সামনে আসে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিষয়টি। মাত্র চার মাসের ট্রেনিং সম্পন্ন করেই এখন তাঁরা বছরে প্রায় এক লাখ ডলারের চাকরি করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র চার মাস ট্রেনিং করে মাসে হাজার ডলার উপার্জন করেছেন এমন এক তরুণ বলেন, ‘চার মাসের একটি ট্রেনিং করে আমি যে কীভাবে নাইনটি থাউজেন্ট ডলার মেক করছি, এটা আমার জন্য খুবই একসাইটিং একটা জিনিস।’
পিছিয়ে নেই নারীরাও। প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন নারীরাও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকেই তাঁদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এমন এক প্রবাসী নারী বলেন, ‘আমার জন্য এটা লাইফ চেঞ্জিং ছিল। আমরা যাঁরা আমেরিকায় আসি, এসে স্ট্রাগল করি, আমাদের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার।’
প্রবাসী হাজারো মানুষের স্বপ্ন এখন এ খাতটিকে ঘিরে। তাঁদের স্বপ্নের এ পথে এগিয়ে দিচ্ছেন প্রকৌশলী আবু হানিপ, যিনি ২০০৪ সালে পিপল এন টেক নামে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত চার হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যাঁদের প্রত্যেকের আয় এখন বছরে এক লাখ ডলারের ওপরে। খাতটিতে এগিয়ে থাকা ভারতীয়দের সঙ্গে এখন পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা।
পিপল এন টেকের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর হানিপ বলেন, ‘পুরো বিশ্বে প্রতিবছর ওয়ান পয়েন্ট টু ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কেট। সেখানে গত বছর ইন্ডিয়া ইনকাম করেছে ৮০ বিলিয়ন ডলার। আমরা বাংলাদেশিরা ইনকাম করেছি একশ’ মিলিয়ন ডলার আউট সোর্সিং খাতে। সেই জায়গাটাতেই আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। কৃষি এবং গার্মেন্টের মতো তথ্যপ্রযুক্তি খাতটাকেও যদি দাঁড় করানো যায়, তাহলে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে আমাদের আর বেশি সময় লাগবে না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সভাপতি শামীম আহসান জানান, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বাংলাদেশের আয় আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো, যার অর্ধেকের বেশি আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ২০১৮ সালে এ খাতে আট হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্য নিয়ে সরকার ১০ লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
বেসিস সভাপতি বলেন, ‘আমাদের এক্সপোর্টের প্রায় ৫৫ শতাংশই আসছে আমেরিকার মার্কেট থেকে। আমেরিকা আমাদের নাম্বার ওয়ান আইটি এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন। তো সেটাকে লক্ষ্য নিয়ে আমরা দেখছি যে, সেখানে আমরা যে ১০ লাখ আইটি এক্সপার্ট তৈরি করব, সেখান থেকে আমরা মনে করছি আড়াই থেকে তিন লাখ প্রকৌশলী সার্ভ করব বাংলাদেশ থেকে। সেখান থেকে আমরা চাইছি যে ৩০ থেকে ৪০ হাজার আইটি প্রফেশনালকে এইচ১বি ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় নিয়ে যেতে পারি, তাহলে রপ্তানিতে এর বিশাল প্রভাব পড়বে।’
বর্তমানে গুগল, ফেসবুকে মতো প্রতিষ্ঠানেও বাংলাদেশিরা এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তাই চাকরির সন্ধানে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত হতে পারে তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের হাতিয়ার।
আরো দেখুন আহমদ পিপুলের ভিডিও প্রতিবেদনে :