ব্রিফকেসে নয়, ভারতের বাজেট এল কাপড়ে মুড়িয়ে

Looks like you've blocked notifications!
শুক্রবার ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার সংসদে বাজেট পেশ করলেন নির্মলা সীতারমন। মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে পূর্ণাঙ্গ বাজেট এটি। ভারতের গত ৭২ বছরের ইতিহাস ভেঙে এদিন সকালে ব্রিটিশ জমানার ব্রিফকেস ছাড়াই সালু কাপড়ে মোড়া ফাইলে বাজেটের কাগজপত্র নিয়ে সংসদে ঢোকেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

বাজেট পেশ করতে গিয়ে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরেই তিন লাখ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে ভারত। বিশ্ব অর্থনীতিতে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ভারত। এক দশক আগেও যা ছিল ১১তম স্থানে। তিনি ঘোষণা করেন, বিদ্যুত খাতে গোটা দেশকে ‘এক দেশ এক গ্রিডের আওতায় আনা হবে।  ২০২২ সালের মধ্যেই ভারতের প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎ, পৌঁছে যাবে দূষণমুক্ত জ্বালানি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছরের মধ্যেই ২১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন স্থাপন করা হবে। ২০১৮ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত রেলের পরিকাঠামোর জন্য খরচ করা হবে ৫০ লাখ কোটি টাকা। তার জন্য বেসরকারি সংস্থার হাত ধরেই এগোতে হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎ এ খাতে সরকারি বেসরকারি অংশীদারী মডেল। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া আইনে বদল আনার আশ্বাস দেন তিনি। শুক্রবার বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানিয়ে দেন, পাঁচ লাখ রুপি পর্যন্ত পুরোপুরি কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের পথে হাঁটছে কেন্দ্র।

বাজেটে বলা হয়েছে, যাদের আয় বার্ষিক ২ কোটি থেকে ৫ কোটি রুপি তাঁদের বাড়তি ৩ শতাংশ কর দিতে হবে। আর যাঁদের ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা বার্ষিক আয়ে ৭ শতাংশ অতিরিক্তি কর দিতে হবে। অর্থাৎ মধ্যবিত্তের কর কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন না করে উচ্চবিত্তের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করবে কেন্দ্র। এদিকে, কর্পোরেট করের ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড়ের কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। এবার থেকে ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন রয়েছে এমন সংস্থাকে ২৫ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হবে। আগে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভার রয়েছে এমন সংস্থাগুলিই লেনদেনের ক্ষেত্রে এই ২৫ শতাংশ কর দিত। এক্ষেত্রে উর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেওয়া হলো।

বাজেট পেশকালে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী জানান, গত কয়েক বছরে প্রত্যক্ষ কর বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে যেখানে প্রত্যক্ষ কর ছিল ৬.‌৩৮ লক্ষ কোটি রুপি। সেটা ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.‌৩৭ লক্ষ কোটি রুপিতে। ফলে সরকারি আয়ও বেড়েছে।

বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে রেলের পরিকাঠামো নির্মাণের কথা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী। নির্মলা সীতারমন জানালেন, শুধুমাত্র রেলের পরিকাঠামোয় আগামী ১১ বছরে (২০৩০ সাল পর্যন্ত) ৫০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হবে।

রেলে ‘আদর্শ ভাড়া’ সমন্বয় করার ঘোষণাও দেন সীতারমন। দেশে আরও ৩০০ কিলোমিটার মেট্রোরেল প্রকল্পের অনুমোদনও দিয়েছে কেন্দ্র। ২০২২ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে ফ্রেট করিডরের কাজ। এর ফলে রেল লাইনের উপরে চাপ কমবে। তার জেরে আগামী দিনে সেমি হাইস্পিড ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। সেমি হাইস্পিড ট্রেনের সংখ্যাও বাড়তে চলেছে। দ্রুত সময়ে ট্রেন চালানোর উপরেও জোর দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে বাজেটের কারণে এবার বাড়ছে না রেলের টিকেটের দাম।

অনেকেই মনে করছেন, রেলের লোকসান কমাতে ভাড়া বাজারের উপরে ছাড়া হতে পারে।  যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্য, সুযোগসুবিধা ও নিরাপত্তায় জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ট্রেনের গতি বাড়ানোর চেষ্টাও জারি থাকবে।