প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবেন তো জনসন?

Looks like you've blocked notifications!

আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই নয়া সরকার গঠনের কাজ শুরু করবেন বরিস জনসন। আজ বুধবার বাকিংহাম প্রাসাদে ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আনুষ্ঠানিকভাবে কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসনকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এরপরই ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব বুঝে নেবেন জনসন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম দিনেই নয়া সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো কারা পাচ্ছেন, সে ঘোষণা দেবেন বরিস জনসন।

বরিস জনসনের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, জনসন সরকারের মন্ত্রিপরিষদের শীর্ষ পদগুলো হবে ‘আধুনিক ব্রিটেন’-এর প্রতিচ্ছবি।

জনসন তাঁর মন্ত্রিপরিষদে পূর্ণমন্ত্রী পদে নারী সদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্বও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।    

নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয় গত সোমবার। এই নির্বাচনে শীর্ষ দুই প্রার্থী বরিস জনসন ও জেরেমি হান্টের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বরিসকেই নতুন নেতা হিসেবে বেছে নেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা।

কনজারভেটিভ দলের যে কয়েকজন নেতার ব্যাপক প্রচার ও অবস্থানের কারণে ব্রেক্সিটের পক্ষে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের গণভোট, তাঁদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন বরিস জনসন। কথার লড়াইয়ে দেশের রাজনীতির মাঠ গরম রাখা আর সমালোচনা কুড়ানোর ক্ষেত্রেও সবার আগে থাকেন জনসন।

ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে সদস্যদের রায় আনতে দুই বছর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন মে।

ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসনের কট্টর ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী মনোভাবের শুরুটা ছিল আশির দশকের শেষদিকে। সে সময় ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন জনসন। তখন থেকেই যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে প্রতিবেদন লিখতেন জনসন।

সে সময় ইউরোপীয় কমিশনে যুক্তরাজ্যের অবস্থান পোক্ত করার ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে কাজ করেছেন ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ‘লৌহমানবী’-খ্যাত মার্গারেট থ্যাচার। ইউরোপীয় কমিশনে যুক্তরাজ্যের ফি কমিয়ে প্রশংসা কুড়ান থ্যাচার।

ব্রেক্সিটের আলোচনা করতে গিয়ে জনসন বরাবরই মার্গারেট থ্যাচারের সে সময়কার শক্ত অবস্থানের উদাহরণ টানেন।

মার্গারেট থ্যাচার যখন ১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখনো এখনকার মতো টোরি দলের ব্যাপক মতবিরোধ ছিল। সে সময়কার অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্যকে টেনে তোলার পাশাপাশি স্নায়ুযুদ্ধকালে বিশ্ব রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন থ্যাচার।

এরপর কনজারভেটিভ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ১১ বছর ক্ষমতায় থাকা মার্গারেট থ্যাচার।

থ্যাচারের বিদায়ের ৩০ বছরের মাথায় ব্রেক্সিট নিয়ে সংকটের মুখে পড়ে যুক্তরাজ্য। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর ক্ষমতা আসে থেরেসার মের হাতে। কিন্তু তাঁকেও বিদায় নিতে হয় ব্রেক্সিট ব্যর্থতার দায় নিয়ে।

ব্রেক্সিটের কট্টর সমর্থক হওয়ায় মে সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জায়গা পান বরিস জনসন। কিন্তু ব্রেক্সিটের ধরন কেমন হবে, সে বিতর্কে পদ ছাড়েন এই টোরি নেতা।

লন্ডনের সাবেক মেয়র এলোমেলো সোনালি চুলের বরিস জনসন, ব্রিটিশ রাজনীতির এক জনপ্রিয় ও বর্ণাঢ্য চরিত্র, যাঁর চটকদার কথা ও বিচিত্র কর্মকাণ্ড  প্রায়ই গণমাধ্যমে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।

ব্রেক্সিট নিয়ে সফল হতে হলে নিজ দলের মধ্যে বিরোধ মেটানোর পাশাপাশি সংসদে বিরোধী দল লেবার পার্টির সমর্থনও খুব দরকার বরিস জনসনের। কেননা, বর্তমান পার্লামেন্টে বড় ব্যবধানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই রক্ষণশীলদের। এ ছাড়া আগের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের মতো নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকেও আস্থা ভোটের দিকে নিয়ে যেতে পারে জেরেমি করবিনের দল।

এদিকে, বিচিত্র চরিত্রের বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ও শিক্ষামন্ত্রী অ্যানে মিলটনসহ কয়েকজন। এ ছাড়া ব্রেক্সিটবিরোধী অনেকেই জনসনের বিপক্ষে একাট্টা।

রাজনৈতিক কর্মময় জীবনের সবটা সময় ব্রেক্সিটের পক্ষে অবস্থান নেওয়া বরিস জনসন নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কতটা সফল হবেন, তা সময়ই বলে দেবে। এখন দেখার বিষয়, ব্রেক্সিটের পাশাপাশি তিনি টোরি দলের ভীতটা শক্ত করতে পারেন কি না।