আমাজনে ভয়াবহ দাবানল

আগুনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা, আবহাওয়াকে দুষলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট

Looks like you've blocked notifications!

‘পৃথিবীর ফুসফুস’খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম রেইনফরেস্ট আমাজনের দাবানল ঠেকাতে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করছে ব্রাজিল। দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো সেনাবাহিনীকে আমাজনের প্রাকৃতিক সম্পদ, আদিবাসীদের আবাসস্থল ও সীমান্ত এলাকায় গিয়ে জঙ্গলের রেকর্ড সংখ্যক দাবানল নেভানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে প্রবল চাপের পরই এমন পদক্ষেপ নিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।

পাশাপাশি দাবানলকে নিষেধাজ্ঞা জারির ‘অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না’ উল্লেখ করে আমাজন নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেন বোলসোনারো।

এর আগে আমাজনের দাবানল নেভাতে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে বড় একটি বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছিল ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড। গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। 

এ ছাড়া ব্রাজিল থেকে মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আমলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইইউ কাউন্সিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী। প্রতি ছয় মাস পরপর ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্য থেকে একটি দেশ ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের পদটি পায়। 

স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে আমাজনের দাবানল নেভাতে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো।

বোলসোনারো বলেন, ‘আমি নিজে একজন সেনা হয়ে আমাজন জঙ্গলকে ভালোবাসতে শিখেছি এবং আমি আমাজনকে রক্ষা করতে চাই।’

ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের ভাষণের ভাষাকে বিবিসির প্রতিবেদনে অস্পষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ভাষণে আমাজনের সংরক্ষিত এলাকা, আদিবাসীদের আবাসস্থল ও সীমান্ত অঞ্চলে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নির্দিষ্ট করে জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।

ব্রাজিলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফার্নান্দো আজেভেদো সেনা মোতায়নের বিষয়টি তদারকি করবেন বলে জানান বোলসোনারো।

প্রাথমিকভাবে আজ শনিবার থেকে এক মাসের জন্য আমাজনে সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।

শুক্রবারের টেলিভিশন ভাষণে আমাজন সংরক্ষণে ব্রাজিলের অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যারা ‘ভিত্তিহীন তথ্য’ ছড়াচ্ছে, তাদের সমালোচনা করে বোলসোনারো  জানান, নিজেদের বেশিরভাগ বনাঞ্চলকে রক্ষা করার মতো ‘আধুনিক আইনি ব্যবস্থা’ ব্রাজিলের রয়েছে।

বোলসোনারো বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে ওই অঞ্চলে (আমাজনে) দুই কোটিরও বেশি ব্রাজিলিয়ান বসবাস করে। কেবল সুরক্ষা নয়, (আমাজনে) উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দিতে হয় আমাদের।

এ ছাড়া আমাজনে দাবানলের হার ১৫ বছর ধরে গড়পড়তা একই রকম রয়েছে বলেও জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।

বোলসোনারো বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এখন উষ্ণ ও শুষ্ক মৌসুম চলছে। এ সময় বাতাসের বেগ বেশি থাকে। প্রতি বছরই এ সময়টা্য় দাবানল লাগে। উষ্ণতম বছরগুলোতে দাবানল লেগেই থাকে।’

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ জানিয়েছে, এ বছরের প্রথম আট মাসে আমাজনে ৭৫ হাজারের বেশি দাবানলের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহেই ১০ হাজারটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় দাবানলের সংখ্যা বেড়েছে ৮৫ শতাংশ। গত বছর প্রায় ৪০ হাজারটি দাবানলের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এ অবস্থা চলতে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী লড়াইয়ে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে কোথাও কোথাও ধোঁয়া দুই হাজার ৭০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎস বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট আমাজন। আমাজন জঙ্গল বিপুল কার্বন জমা রেখে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতিকে খানিকটা শ্লথ রেখেছে।

চলতি সপ্তাহে মহাকাশবিষয়ক গবেষণা সংস্থা নাসা, রাজনীতিবিদ ও তারকারা আমাজনের দাবানলের ছবি শেয়ার করার পর থেকে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ‘হ্যাশট্যাগ প্রে ফর আমাজন’ আহ্বান।

আমাজনের দুর্দশায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, অক্সিজেনের এ উৎসের ক্ষতি বিশ্ব বহন করতে পারবে না।

বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এ অবস্থা চলতে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী লড়াইয়ে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। আমাজনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস হলে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে প্রচণ্ড প্রভাব পড়তে পারে। ব্রাজিলের আমাজোনাস, রন্ডোনিয়া, পারা ও মাতো গ্রোসো এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। রেইনফরেস্ট অঞ্চল হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় আমাজনে আর্দ্রতা বজায় থাকে। তবে জুলাই-আগস্ট মাসে আমাজনের আবহাওয়া কিছুটা শুষ্ক হয়ে ওঠে। তবে স্থানীয় পরিবেশবিদদের ধারণা, এই আগুন প্রাকৃতিক দাবানল নয়, বরং আমাজনের এই আগুনের পেছনে রয়েছে মানুষের ষড়যন্ত্র। চাষ ও বসবাসের জমি পাওয়ার জন্য স্থানীয় লোকজন জঙ্গলের গাছ কাটা ও আগুন ধরানো শুরু করেছে বলে আশঙ্কা করছে অনেকে।