কাশ্মীরে ইন্টারনেট ও ফোনসেবা ফিরিয়ে দিন
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ পুনরায় চালু করতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে কাশ্মীরের অচলাবস্থা উঠিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার দাবি করছে, জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর ভুয়া বা উসকানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়া আটকাতেই এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
কিন্তু ভারত সরকারের এমন পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার এবং তথ্য সরবরাহ ও প্রাপ্তির অধিকারসহ মৌলিক স্বাধীনতা হরণ হচ্ছে বলে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়।
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, ‘কাশ্মীরে ভারত সরকার টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে রাখার ফলে কাশ্মীরিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত সরকারের।’
তিনি আরো বলেন, ‘(ভারত সরকারের) আরোপিত এই বিধিনিষেধ (কাশ্মীরবাসীর) ক্ষোভকে উসকে দিচ্ছে, (এখানকার) অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং গুজবে ঘি ঢালছে। এর ফলে এখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরো খারাপ হচ্ছে।’
এদিকে গতকাল বুধবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও জম্মু-কাশ্মীর সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এ ছাড়া কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ রদ বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে যে মামলাগুলো করা হয়েছিল, সেগুলোকে পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। আগামী অক্টোবরে মামলাগুলোর শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল মোদি সরকার। ওই সময় রাজ্যকে ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার সিদ্ধান্তও জানানো হয়। এসব বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, অনির্দিষ্টকালের অবরোধ আরোপ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে দমন করা—এমন সব পদক্ষেপের পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের উচিত স্বচ্ছ তথ্য উপস্থাপনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা।
মিনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইন্টারনেটসহ মতপ্রকাশের মাধ্যমের ওপর বিধিনেষেধ আরোপ করা যায়। তবে তা বৈধ কোনো উদ্দেশে স্বল্প পরিসরে। কিন্তু (কাশ্মীরে) বর্তমানে আরোপিত বিধিনিষেধ এমন কোনো বৈধ উদ্দেশ্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জনগণকে ঠিকমতো ও বাধাহীনভাবে যোগাযোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা নয়, ভারত সরকারের দায়িত্ব জনগণের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখা।’