তেলক্ষেত্রে হামলা যে কারণে ঠেকাতে পারেনি সৌদি আরব
সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে গত শনিবারের বড় ধরনের হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ইরানের কোন এলাকা থেকে তেলখনিগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পারস্য উপসাগরের উত্তরাঞ্চলের শেষ প্রান্তে ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে এসব হামলা চালানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা আরো জানান, সৌদি আরবের ড্রোন ও মিসাইল বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইয়েমেনের হামলা নস্যাৎ করতে দক্ষিণ দিকে তাক করা ছিল। তাই ইরান থেকে আসা হামলা ঠেকাতে পারেনি সৌদি আরব।
এদিকে বৈশ্বিক তেল সরবরাহে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটানো এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইরান।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় খাতের প্রতিষ্ঠান আরামকো পরিচালিত দুটি তেল উত্তোলন ক্ষেত্রে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরানের মদদপুষ্ট ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।
এর আগেও সৌদি আরবের তেলের পাইপলাইনসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে হুতিরা। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলাটি ছিল অনেক ব্যাপক মাত্রার। তবে যুক্তরাষ্ট্র হুতি বিদ্রোহীদের হামলা চালানোর দাবি নাকচ করে দিয়েছে। কারো সাহায্য ছাড়া হুতিদের পক্ষে এত বড় হামলা চালানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দিহান মার্কিন প্রশাসন। গত রোববার মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের বিশ্বাস সৌদি আরবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দুটি দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে নয়, বরং উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এসেছে।
এ হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ হামলাকে সৌদি আরবের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘ইয়েমেনের জনগণের’ পাল্টা জবাব বলে আখ্যা দিয়েছেন।
শনিবারের হামলার পর বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। প্রতি ব্যারেল তেলের মূল্য একপর্যায়ে ৭১ দশমিক ৯৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। তবে তেলের বাজার যতটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, ততটা খারাপ অবস্থায় নেই এ মুহূর্তে।
গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী জানান, চলতি মাসের শেষ নাগাদ তেলক্ষেত্র দুটি পুরোদমে চালু হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন। পাশাপাশি তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত তেলেক্ষেত্র দুটি এ মুহূর্তে অর্ধেকটা চালু হয়েছে।
কোথায় হামলা হয়েছিল?
গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে গত শনিবার দেখা যায়, আবকাইক শহরে আরামকোর বিশ্বের বৃহত্তম অশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত প্রকল্পে শনিবার ড্রোন হামলার জেরে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হয়। এ ছাড়া খুরাইস তেলক্ষেত্রেও আরেকটি হামলা হলে আগুন লাগে ওই তেলক্ষেত্রেও।
আবকাইক তেল পরিশোধনাগারটি সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দাহরাইন থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। আর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেলক্ষেত্র খুরাইস আরো প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এর আগে ২০০৬ সালে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী আবকাইক তেল পরিশোধনাগারে আল-কায়েদার আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল।
সৌদি আরবের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় একের পর এক রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হুতিরা। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন সৌদি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
২০১৫ সালের মার্চে হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলের সিংহভাগ এলাকা দখলে নিলে দেশটিতে সংকট তীব্রতর হয়ে ওঠে। হুতিরা ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ্রাব্বাহ মানসুর হাদিকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
এরপরই হাদি সরকারকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করতে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলো জোট বেধে ইয়েমেনে বিমান হামলা শুরু করে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সৌদি জোট ইয়েমেনে হামলা করার পর থেকে অন্তত সাত হাজার ২৯০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষেরই মানবিক সহায়তা অথবা নিরাপত্তা প্রয়োজন। এদের মধ্যে এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।