শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ সাফল্য অর্জন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/09/21/photo-1569039357.jpg)
শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে ‘বলিষ্ঠ অগ্রগতি’ দেখানো দেশগুলোর মাঝে বাংলাদেশ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
শিশু ও মাতৃমৃত্যু বিষয়ে ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচওর নেতৃত্বে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর তৈরি করা নতুন হিসেব অনুযায়ী, পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে অধিক নারী ও তাদের শিশুরা বেঁচে যাচ্ছে।
তবে এ সফলতার পরও বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতি ১১ সেকেন্ডে একজন গর্ভবতী নারী বা নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে।
শুক্রবার নিউইয়র্ক থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয় বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর থেকে শিশুমৃত্যু প্রায় অর্ধেক এবং মাতৃমৃত্যু এক-তৃতীয়াংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে বিশ্ব বলিষ্ঠ অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০০০ সালের পর থেকে ১৫ বছরের নিচের শিশুমৃত্যুর পরিমাণ এক কোটি ৪২ লাখ থেকে ৫৬ শতাংশ কমে ২০১৮ সালে ৬২ লাখে দাঁড়িয়েছে।
ডব্লিউএইচওর মতে, শিশু বা মাতৃমৃত্যু হ্রাসে বলিষ্ঠ অগ্রগতি দেখানো কিছু দেশ হলো- বাংলাদেশ, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, কাজাখস্তান, মালাউই, মরক্কো, মঙ্গোলিয়া, রুয়ান্ডা, পূর্ব তিমুর ও জাম্বিয়া।
স্বাস্থ্যকর্মী খাতে বিনিয়োগ, গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য বিনামূল্যে সেবা চালু এবং পরিবার পরিকল্পনায় সহায়তার মাধ্যমে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে এ সফলতা এসেছে বলে জানায় ডব্লিউএইচও।
এসব দেশের অনেকগুলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি নজর দিয়েছে।
‘যেসব দেশ প্রত্যেককে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও উচ্চ মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেয় সেখানে নারী ও শিশুরা বেঁচে যায় এবং সমৃদ্ধি লাভ করে। এটাই সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার শক্তি,’ বলেন ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ডা. টেডরস আডানম গেব্রিয়াসস।
কিন্তু নতুন হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে, ২০১৮ সালে ১৫ বছরের নিচের বয়সী ৬২ লাখ শিশু মারা গেছে। আর আগের বছর গর্ভধারণ ও প্রসব সংক্রান্ত জটিলতায় মারা গেছেন দুই লাখ ৯০ হাজারের অধিক নারী।
মারা যাওয়া মোট শিশুদের মধ্যে ৫৩ লাখের মৃত্যু হয়েছে প্রথম ৫ বছরের মাঝে। যাদের প্রায় অর্ধেকই মারা গেছে জীবনের প্রথম মাসে।
প্রসবকালে ও তার পরের সময়টিতে সবচেয়ে নাজুক থাকে নারী ও নবজাতকরা। নতুন হিসাবে বলা হচ্ছে, গর্ভবর্তী নারী ও নবজাতকদের মধ্যে প্রতি বছর ২৮ লাখ বা প্রতি ১১ সেকেন্ডে একজন মারা যায়। যার বেশিরভাগ কারণই প্রতিরোধযোগ্য।
‘পৃথিবী জুড়ে শিশুর জন্ম এক আনন্দময় উপলক্ষ। তথাপি, প্রতি ১১ সেকেন্ডে একটি জন্ম একটি পারিবারিক বিষাদে পরিণত হয়,’ বলেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর।
‘জন্মের সময় মা ও নবজাতককে সাহায্যের জন্য এক জোড়া দক্ষ হাতের পাশাপাশি পরিষ্কার পানি, পর্যাপ্ত পুষ্টি, প্রাথমিক ওষুধ ও টিকা জীবন ও মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। এ মূল্যবান জীবনগুলো রক্ষা করতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনিয়োগে প্রয়োজনীয় সবকিছু আমাদের অবশ্যই করতে হবে,’ বলেন তিনি।
নতুন হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে বিশ্বব্যাপী বিশাল বৈষম্য রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সাব-সাহারা আফ্রিকার নারী ও শিশুরা মৃত্যুর যথেষ্ট উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। উচ্চ-আয়ের দেশগুলোর তুলনায় সাব-সাহারায় মাতৃমৃত্যুর হার প্রায় ৫০ গুণ বেশি। আর তাদের শিশুরা জীবনের প্রথম মাসে মারা যায় ওই তুলনায় ১০ গুণ বেশি হারে।