‘আপনারা ফাঁকা বুলি শুনিয়ে আমার স্বপ্ন-শৈশব চুরি করেছেন’
বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে সুইডেনের ১৬ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গ। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এক আবেগঘন বক্তব্যে গ্রেটা বলে, ‘আপনারা ফাঁকা বুলি শুনিয়ে আমার স্বপ্ন ও শৈশব চুরি করেছেন।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানে গতকাল সোমবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন ইউএন ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট। বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের নেতারা একদিনের ওই সম্মেলনে অংশ নেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আগেই জানিয়েছিলেন, কার্বন নিঃসরণ কমানোর কার্যকর পরিকল্পনাসহ এলেই কেবল সম্মেলনে কথা বলতে পারবেন বিশ্বনেতারা। সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেয় সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ।
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিষয়াদি সচরাচর এড়িয়ে চলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই এ সম্মেলনে ট্রাম্প থাকবেন না বলেই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু অল্প কিছু সময়ের জন্য ট্রাম্পকে সম্মেলনে দর্শকের কাতারে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
কী বলেছে গ্রেটা থানবার্গ?
এক আবেগঘন বক্তব্যে গ্রেটা বলে, ‘কোনো কিছুই ঠিক নেই। আমার এথানে থাকার কথা নয়। আমার থাকার কথা সমুদ্রের ওপারের একটি স্কুলে। কিন্তু আপনারা আমাদের মতো ছোটদের কাছে এসেছেন আশার কথা শুনতে। এই সাহসটা হয় কী করে আপনাদের?’
‘আপনারা ফাঁকা বুলি শুনিয়ে আমার স্বপ্ন ও আমার শৈশব চুরি করেছেন,’ অভিযোগ করে গ্রেটা।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশ্বনেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে গ্রেটা বলে, ‘আমরা আপনাদের ওপর নজর রাখব।’
বিশ্বনেতারা কী বললেন?
জাতিসংঘের মহাসচিব তাঁর বক্তব্য বলেন, ‘জলবায়ু নিয়ে বিশ্ব এক গভীর গর্তে পড়েছে। অতিসত্বর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তবে এখনো খুব বেশি দেরি হয়নি।’
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ৪০০ কোটি ইউরো অর্থ-সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
উষ্ণমণ্ডলীয় বনাঞ্চল রক্ষার্থে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বাড়তি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডেন জানান, তাঁর দেশ জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্বন নিঃসরণের হার ২০০৬ সালের পর থেকে কমতে শুরু করেছে। আমাদের বিদ্যুতের শতকরা ৮০ ভাগই আসে নবায়নযোগ্য পানি ও বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।’
‘আমরা এরই মধ্যে পার্লামেন্টে জিরো কার্বন বিল উপস্থাপন করেছি। এই বিলের উদ্দেশ্য হলো বিরূপ ও ধ্বংসাত্মক আবহাওয়ার প্রকোপ ঠেকাতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ডসহ আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিবেশী দেশগুলো সুরক্ষা করা,’ যোগ করেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা
গতকালের সম্মেলনের কয়েক দিন আগেই বিশ্বজুড়ে লাখো তরুণ পরিবেশকর্মী বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করতে রাস্তায় নামে।
এ সম্মেলনের ঠিক আগে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দিয়েছেন সতর্কবার্তা। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার ছাপ ও প্রভাব খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বলেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের অধ্যাপক ব্রায়ান হসকিনস বলেন, ‘স্কুলের বাচ্চাদের তীব্র চিৎকার শোনা উচিত আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে—গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের হার শূন্যতে নামিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জলবায়ুর অনিবার্য পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো।’