জাতিসংঘে মন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় মিয়ানমার

Looks like you've blocked notifications!

সেনাবাহিনীর দমন ও নিপীড়নের মুখে দেশটির উত্তর রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে মিয়ানমার সরকার। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলমান অধিবেশনের পঞ্চম দিনে গতকাল শনিবার এ কথা জানিয়েছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের কার্যালয়ের মন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সোয়ে।

বছর দুয়েক আগে সেনা অভিযান থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয় অন্তত নয় লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে কিয়াও টিন্ট সোয়ে জানান, ২০১৭ সালের নভেম্বরে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সংস্থা-আসিয়ানসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিলে মিয়ানমার কাজ করছে জানিয়ে কিয়াও টিন্ট সোয়ে বলেন, ‘বাছাইকৃতদের (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এবং যারা দেশে ফিরবে, তাদের জন্য আরো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করাকেই এ মুহূর্ত আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

প্রত্যাবাসিতরা নাগরিক পরিচয়পত্র পাবেন

কিয়াও টিন্ট সোয়ে জানান, রাখাইন রাজ্য থেকে যেসব মানুষকে উৎখাত করা হয়েছিল, তাদের ‘ভিন্ন আইনি পরিচয়’ রয়েছে। 

মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য যেসব শরণার্থী মনোনীত হবে, তাদের নাগরিক পরিচয়পত্র দেওয়া হবে বলে মিয়ানমারের মন্ত্রী জানান। কিয়াও টিন্ট সোয়ে আরো জানান, আর বাদবাকিদের যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অভিবাসীদের ‘গ্রিন কার্ড’ দেয়, সে আদলে জাতীয় প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে।  

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমার সরকার কাজ করে যাচ্ছে দাবি করে কিয়াও টিন্ট সোয়ে বলেন, ‘২০১৬ ও ২০১৭ সালে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) জঙ্গিগোষ্ঠীর ভয়াবহ হামলার জেরেই বর্তমান মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’

বাংলাদেশ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ শরণার্থী স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে এসেছে জানিয়ে কিয়াও টিন্ট সোয়ে বলেন, ‘আরসার হত্যাকাণ্ড ও হুমকিসহ নানা বাধা সত্ত্বেও তারা ফিরে এসেছে।’

তবে মিয়ানমারে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার দাবি নাকচ করে দিয়ে কিয়াও টিন্ট সোয়ে জানান, এ ধরনের অঞ্চলের কোনো প্রয়োজন বা কার্যকারিতা নেই। 

বাংলাদেশকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে কিয়াও টিন্ট সোয়ে বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ইস্যুটি সমাধানে এটাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য উপায়।’

সামরিক তদন্ত চলছে

রাখাইন রাজ্যে সেনা নিপীড়নের পেছনে কারা দায়ী, তা জানতে সামরিক পর্যায়ের তদন্ত চলছে বলে জানান কিয়াও টিন্ট সোয়ে।

তিনি বলেন, ‘একটি সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী খুব শিগগির একটি কোর্ট মার্শাল হবে।’

রাখাইন রাজ্যে অপরাধের অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ প্রসঙ্গেও কথা বলেন কিয়াও টিন্ট সোয়ে।

তবে কিয়াও টিন্ট সোয়ে বলেন, ‘অনেক বিশেষজ্ঞ এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। ওই অঞ্চল থেকে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তার পেছনে আরাকান স্যালভেশন আর্মির প্রত্যক্ষ দায় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টি আইসিসি আমলে নেয়নি।’  

এ ছাড়া আইসিসির বিচারের ভিত্তি নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন কিয়াও টিন্ট সোয়ে। তিনি জানান, তদন্তের ভিত্তি হিসেবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছেন আইসিসির আইনজীবী। এসব প্রতিবেদনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ‘তথ্যগত ভুল’ রয়েছে বলে কিয়াও টিন্ট সোয়ে  দাবি করেন।

কিয়াও টিন্ট সোয়ের ভাষ্যমতে, আইসিসি কেবল রাখাইন রাজ্য থেকে মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন; কিন্তু এর পেছনে যে ‘বড় প্রেক্ষাপট’ রয়েছে, সে বিষয়ে ‘নিশ্চুপ’ রয়েছেন। এ অঞ্চলে সৃষ্ট সংকটের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষ জড়িত বলেও কিয়াও টিন্ট সোয়ে দাবি করেন।

কিয়াও টিন্ট সোয়ে বলেন, ‘এই নিশ্চুপ থাকাটা মিয়ানমারের জনগণ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মধ্যে বিভেদ বাড়াচ্ছে। কারণ, এতে করে মিয়ানমারের জনগণ এটা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন যে তাঁরা এ ইস্যুকে কীভাবে নিয়েছেন, তা কম গুরুত্বপূর্ণ; বরং বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা সত্যিকারের পরিস্থিতি সম্পর্কে যে ভাসা ভাসা ধারণা পাচ্ছ, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’