বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন

কে এই গ্রেটা ‘হাউ ডেয়ার ইউ’ থুনবার্গ?

Looks like you've blocked notifications!
জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি : সংগৃহীত

গোটা বিশ্বে জলবায়ুকর্মী হিসেবে গ্রেটা থুনবার্গের নাম এখন সবার সামনে। জলবায়ু সংকটে বিশ্বনেতাদের সমালোচনা করে ১৬ বছর বয়সী এই কিশোরীর দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ ‘হাউ ডেয়ার ইউ’ ফিরছে নেটিজেনদের মুখে মুখে।

গ্রেটার আহ্বানে সম্প্রতি ১৫০টি দেশের লাখ লাখ মানুষ ও স্কুলশিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তনে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

যুক্তি দিয়ে সোজাসাপ্টা কথা এবং বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দিয়ে এই কিশোরী জয় করেছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা।

সম্প্রতি বিকল্প নোবেলখ্যাত ‘রাইট লাইভলিহুড’ পুরস্কার পেয়েছে গ্রেটা থুনবার্গ। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে অনুপ্রাণিত করার জন্য গ্রেটাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে এক লাখ সুইডিশ ক্রোনা পায় গ্রেটা।

নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে গ্রেটা বলে, ‘এ পুরস্কার সম্মানের। আমি কৃতজ্ঞ। তবে এর অংশীদার শুধু আমি একা নই, যারা এবং যেসব শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে, তারা সবাই।’ এর পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রেটাকে অনেকেই জানিয়েছেন শুভেচ্ছাবার্তা।

কিন্তু কে এই কিশোরী? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানায়, গ্রেটা থুনবার্গের জন্মস্থান সুইডেন। ২০০৩ সালের ৩ জানুয়ারি সুইডেনের স্টকহোমে জন্মগ্রহণ করে সে। তার মা লেনা এরম্যান একজন সংগীতশিল্পী এবং বাবা সোভান্তে থুনবার্গ একজন অভিনেতা।

২০০৮ সালে মাত্র আট বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শোনে গ্রেটা। তখন সে এর কিছুই না বুঝলেও তিন বছর পর সে সব বুঝতে পারে। পরে গ্রেটা এ বিষয়ে হতাশায় ভোগে। পরিবারের সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানায় সে।

সুইডেনে গত বছর আগস্টে এক শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে ‘ভবিষ্যতের জন্য শুক্রবার’ আন্দোলনের নাম দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে গ্রেটা।

ওই সময় সুইডেন পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধের প্ল্যাকার্ড নিয়ে গ্রেটাকে একাই আন্দোলন করতে দেখা যায়। গ্রেটার এই ‘স্কুল স্ট্রাইক’ আন্দোলনে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন।

পরে আর তাকে একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে হয়নি। এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশ দেশে।

চলতি বছরের মে মাসে টাইম ম্যাগাজিন তাকে প্রচ্ছদকন্যা করে শিরোনামে লিখে, ‘নতুন প্রজন্মের নেতা’। এরপরে গ্রেটাকে রোল মডেল ভাবতে শুরু করে অনেকেই।

সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের ‘হাউ ডেয়ার ইউ’ বলে আবারও আলোচনায় আসে গ্রেটা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় লেখালেখি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বনেতাদের তিরস্কার করে গ্রেটার বক্তব্যের ভিডিও।

জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে গ্রেটা জানায়, এ প্রজন্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন তাঁরা। কীভাবে তাঁদের এত সাহস হয়?

ওই সময় গ্রেটা বলে, ‘আমার শৈশব ও স্বপ্ন আপনারা কেড়ে নিয়েছেন। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে ।’

বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে গ্রেটা বলে, ‘আপনাদের ওপর আমাদের নজর থাকবে। যদি পরিবেশ রক্ষায় আপনারা ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা আপনাদের কখনোই ক্ষমা করব না।’

গ্রেটার এই বক্তব্যের প্রতি বিশ্বনেতাদের অনেকেই তাকে স্বাগত জানায়। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও জানান, জলবায়ু সংকটে বিশ্বকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা।

এর মধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেছে গ্রেটা থুনবার্গ।

পরে সংবাদমাধ্যমে ট্রুডোকে উদ্দেশ করে গ্রেটা জানায়, বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস। আর সেটা নিঃসরণে পর্যাপ্ত কাজ করছেন না ট্রুডো।

গ্রেটা বলে, ‘বিশ্বের সব নেতার জন্যই আমার একই বার্তা ।’

গ্রেটার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার প্রধানমন্ত্রী গ্রেটার মতামতের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ট্রুডো বলেন, ‘গ্রেটা একদম ঠিক বলেছে। আমাদের আরো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অনেক কিছুই করা উচিত’।