‘তোমরা আমাদের মৃত্যুমুখে ছেড়ে দিয়েছ’, যুক্তরাষ্ট্রকে কুর্দি নেতা

Looks like you've blocked notifications!

তুরস্কের সামরিক অভিযানে পর্যুদস্ত সিরিয়ার কুর্দিদের এক নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘তুরস্কের এই হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র আদৌ কোনো ভূমিকা নেবে কি না।’

কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) কমান্ডার জেনারেল মাজলুম কোবানি আবদি গত বৃহস্পতিবার এক সভায় মার্কিন কূটনীতিক উইলিয়াম রোবাককে বলেছেন, ‘তোমরা আমাদের মৃত্যুমুখে ছেড়ে চলে গেছ।’ মার্কিন প্রশাসনের একটি সূত্রের বরাতে এ কথা জানিয়েছে সিএনএন।

তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি দমনে আন্তর্জাতিক জোটের সহকারী বিশেষ দূত উইলিয়াম রোবাককে জেনারেল মাজলুম বলেন, ‘আপনারা জনগণকে রক্ষা করতে চান না, তাই আর সেনা পাঠাচ্ছেন না। আপনারা আমাদের বেচে দিয়েছেন। এটা চরম অনৈতিক।’

কুর্দিরা চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র হয় তুর্কি হামলা ঠেকাতে সহযোগিতা করবে অথবা রাশিয়ার মদদপুষ্ট সিরিয়ার আসাদ সরকারের সঙ্গে হাত মেলানোর অনুমতি দেবে। যাতে করে ‘নো-ফ্লাই জোন’ কার্যকর করতে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো কুর্দি এলাকা পর্যন্ত আসতে পারে।

এদিকে পেন্টাগনে সাংবাদিকদের মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বলেন, ‘আমরা আমাদের কুর্দি পার্টনারদের একেবারে ছেড়ে আসিনি। সিরিয়ার অন্য অংশে তাদের সঙ্গে আমাদের সেনারা এখনো অনেক জায়গায় আছে। আইএসের খেলাফতকে ছিন্নভিন্ন করতে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স আমাদের সহযোগিতা করেছে। তাই বলে আমরা তুরস্ক ও কুর্দিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংঘাতের মধ্যে আমাদের সেনাদের রাখতে পারি না। আমরা এ কারণে সিরিয়ায় যাইনি।’

মার্কিন কূটনীতিককে জেনারেল মাজলুম বলেন, ‘আপনারা আমাদের রক্ষা করতে পারবেন কি না, সেটা আমাদের জানতে হবে। না হলে তো আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আমাদের এখানে আসতে বলতে হবে।’

তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকাটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পরই সেখানে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের গ্রিন সিগন্যালেই এ হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। এ নিয়ে বেশ সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কুর্দি এলাকাটিতে ৫০ জন মার্কিন সেনা দলের অবস্থান ছিল। এখনো সেখানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি অস্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে।

গত বুধবার থেকে উত্তর সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকাটিতে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। আকাশ ও স্থলপথে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার তুর্কি সামরিক বাহিনী তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার রাস আল-আইন ও তাল আবইয়াদ শহরের আংশিক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। দুটি শহরেই তুর্কি বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়। তাল আবইয়াদ শহরের একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এলাকাটিতে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলোর হাতে কয়েক হাজার আইএস যোদ্ধা বন্দি হিসেবে রয়েছেন। তাঁরা এই সুযোগে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

হামলার ফলে উত্তর সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে এক লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।

২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের ফলে এই এলাকা সিরিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ২০১৫ সাল থেকে এটি কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল এসডিএফ। তুরস্কের অভ্যন্তরে কুর্দি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার কারণে তুরস্ক তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে থাকে। সীমান্তে নিরাপদ এলাকা সৃষ্টির অজুহাত দিয়ে তুরস্ক অভিযানের নামে এসব হামলা চালাচ্ছে।