তুরস্ক-সিরিয়া সংঘাত

তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

Looks like you've blocked notifications!

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ন্যাটো মিত্র তুরস্কের দুজন মন্ত্রীসহ তিন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ফোন করে অতিদ্রুত একটি শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে বলেছেন।

এ ছাড়া যত শিগগির সম্ভব তুরস্ক সফর করবেন বলেও জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

এর আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিরিয়ান সেনারা ঢুকে পড়ে। এর ফলে তুরস্কের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে সিরিয়ার সেনাদের সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর কুর্দিরা আসাদ সরকারের সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কুর্দি এলাকায় তুরস্কের হামলার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসন বলছে, তুর্কি-কুর্দি বিরোধ দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের বিবদমান বিষয়, এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু করার নেই।

অথচ কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স সিরিয়া যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় একই সঙ্গে আইএস ও আসাদবিরোধী লড়াই করে আসছিল তারা। এখন নিজেদের বিপদকালে যুক্তরাষ্ট্রের সরে পড়ায় বেশ বেকায়দায় পড়েছেন কুর্দি নেতারা।

তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে অঞ্চলটি থেকে আইএস জঙ্গি ও কুর্দি বিদ্রোহীদের বিতাড়িত করে তারা সেখানে একটি ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এদিকে, তুরস্ক অভিযানের ঠিক আগে সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তুরস্কে বসবাসরত প্রায় ২০ লাখ সিরীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে দীর্ঘদিন ধরেই ‘সেফ জোন’ বাস্তবায়ন করতে চাইছে আঙ্কারা। এই সেফ জোন সিরিয়ার প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।

কিন্তু এসব শরণার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই কুর্দি নয়। এর ফলে স্থানীয় কুর্দি জনগোষ্ঠী জাতিগত নিধনের শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা সেফ জোনের সমালোচকদের।

তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকাটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পরই সেখানে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের গ্রিন সিগন্যালেই এ হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। এ নিয়ে বেশ সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কুর্দি এলাকাটিতে ৫০ জন মার্কিন সেনা দলের অবস্থান ছিল। এখনো সেখানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি অস্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে।

গত বুধবার থেকে উত্তর সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকাটিতে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। আকাশ ও স্থলপথে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে।

তুরস্কের ভেতরে কুর্দি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগসাজশের কথা বলে সিরিয়ার কুর্দিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে তুর্কি সরকার। এতে উভয়পক্ষের শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। লক্ষাধিক কুর্দি সাধারণ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তুর্কি সামরিক বাহিনী তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার রাস আল-আইন ও তাল আবইয়াদ শহরের আংশিক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। দুটি শহরেই তুর্কি বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়। তাল আবইয়াদ শহরের একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এলাকাটিতে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলোর হাতে কয়েক হাজার আইএস যোদ্ধা বন্দি হিসেবে রয়েছেন। তাঁরা এই সুযোগে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

হামলার ফলে উত্তর সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে এক লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।

২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের ফলে এই এলাকা সিরিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ২০১৫ সাল থেকে এটি কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল এসডিএফ। তুরস্কের অভ্যন্তরে কুর্দি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার কারণে তুরস্ক তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে থাকে। সীমান্তে নিরাপদ এলাকা সৃষ্টির অজুহাত দিয়ে তুরস্ক অভিযানের নামে এসব হামলা চালাচ্ছে।