বাংলাদেশিদের হাতের ছোঁয়ায় শ্যামল মদিনা

Looks like you've blocked notifications!
শ্রমিক থেকে খেজুর বাগানের মালিক বাংলাদেশের নূরুল ইসলাম (ডানে)। ছবি : এনটিভি

রুক্ষ, বালুময় দেশ সৌদি আরবের একটি শহর মদিনা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত এই অঞ্চলটির একটি বড় এলাকা শ্যামল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশিদের প্রচেষ্টায়। অনাবাদি, পতিত, বালু আর কাঁকর মেশানো মাটিতে যে ফলতে পারে শ্যামল ফসল তা দেখিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

মদিনা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে তাবুক চেক পয়েন্টের পাশের এলাকা বাহারা। মূলত বাংলাদেশিদের হাতের ছোঁয়ায় এই এলাকাটি পরিণত হয়েছে কৃষিনগরীতে। ওই এলাকায় খেজুরবাগান থেকে শুরু করে অনেকগুলো শাকসবজির বাগান পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশিরা। সবুজ শ্যামলিমাময় দেশের মানুষ বলেই হয়তো একেবারেই নিষ্ফলা বালু-কাঁকরময় মরুভূমিকে তাঁরা পরিণত করতে পারছেন ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্র হিসেবে।

বাহারা এলাকার সবচেয়ে বড় কৃষি খামারটি পরিচালনা করেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছেলে মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। প্রায় দেড় বর্গকিলোমিটার আয়তনের খেজুরবাগান তাঁর। ওই বাগানের চিত্র আবার আমাদের বাগানগুলোর মতো নয়। আলো, তাপ ও পানিনিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহের সুবিধা আছে অত্যাধুনিক ওই খামারগুলোতে। আর এই খামারেই উৎপাদিত হচ্ছে বিশ্বখ্যাত সৌদি আরবের খেজুর।

এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘নিজস্ব বুদ্ধি ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আরবের মরুভূমিতে এই খেজুরগাছের বাগান করেছি। শুরুর দিকে সবাই বলত এই মরুতে কিছু হবে না। কিন্তু এখানে খেজুর ধরার পর আশপাশের অনেকেই এই জায়গায় বাগান করেছে।’

নূরুল ইসলাম জানান, বিশ্বখ্যাত ১৩ জাতের খেজুরের গাছ রয়েছে তাঁর বাগানে। বাগানের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন খেজুরগুলো হলো আজুয়া, আম্বার, খালমা ও রুতান জাতের খেজুর।

সফল এই চাষি আরো জানান, তাঁর খেজুরবাগানে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। বাংলাদেশি ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান ও সুদানের শ্রমিকরা কাজ করেন বাগানে।

নূরুল ইসলাম জানালেন, প্রতিবছর এই বাগান থেকে ৬০-৭০ লাখ টাকা আয় হয়। দেশ থেকে শ্রমিক আনতে আগ্রহী তিনি। তিনি বলেন, দেশ থেকে শ্রমিক আসতে পারলে দেশের রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশি কৃষি খামারগুলোতে বিপুলসংখ্যক বাঙালির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

শ্রমিক থেকে বাগানের মালিক : দেশে সামান্য লেখাপড়ার পর চট্টগ্রাম শহরে কাপড়ের দোকানে চাকরি করতেন নূরুল ইসলাম। প্রায় ১৭ বছর আগে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবে আসেন নূরুল ইসলাম। তিনি খেজুরের বাগানে কাজ করতেন। একসময় তিনি বাগানের সব কাজ শিখে ফেলেন। আট বছর শ্রমিকের কাজ শেষে তিনি নিজেই জমি ইজারা নিয়ে খেজুরের খামার গড়ে তোলেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন তিনি ফজরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত কাজ করেন।

নূরুল ইসলাম জানান, খেজুরবাগানের অনেক যত্ন করতে হয়। প্রতিদিন পানি দিতে হয়। সাতদিন পরপর গাছের আশপাশে পরিষ্কার করতে হয়। বিভিন্ন রকম সার দিতে হয়। সাধারণত গাছ লাগানোর দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে গাছে খেজুর ধরে।

সৌদি আরবের বিভিন্ন জায়গায় নূরুল ইসলামের বাগানের খেঁজুর বিক্রি হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতসহ এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশে তাঁর বাগানের খেঁজুর রপ্তানি করা হয়।

মদিনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলী মো. জিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানান, নূরুল ইসলামের বাগানের খেজুর অনেক ভালো। যথাসময়ে দোকানে খেজুর পৌঁছে দেন। আর তাঁর বাগানে বিভিন্ন রকমের খেজুর আছে। তাই অন্য কারো কাছ থেকে তিনি খেজুর নেন না।