প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি : যা জানা দরকার
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কার্বন নির্গমন কমানো ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি না মানা হলে ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে দাঁড়াতে পারে। তবে চুক্তি মানলে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।
ফ্রান্সের রাজধানীতে দুই সপ্তাহ ধরে চলা জলবায়ু সম্মেলন ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্যারিসের স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার খসড়া চূড়ান্ত হয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে আজ রোববার বলা হয়েছে, প্যারিসের চুক্তির খসড়ায় ১৯০টি দেশ অনুমোদন দেবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্যারিসের জলবায়ু চুক্তির চূড়ান্ত খসড়ার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো :
১। চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব কার্বন নির্গমন কমানো এবং এই গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য আনা।
২। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখা। সম্ভব হলে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে।
৩। প্রতি পাঁচ বছর ব্যবধানে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা।
৪। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ২০২০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়ন। ভবিষ্যতে আরো লাগলে আরো অর্থায়নের অঙ্গীকার।
পরবর্তী সময়ে কী হবে
কার্বন নির্গমনের বিষয়ে উন্নত বিশ্বের মতের সঙ্গে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন, ২০১৫ (কপ-২১)-তে যোগ দেওয়া সব দেশ এখন পর্যন্ত খসড়া চুক্তি অনুমোদন দেয়নি। কারণ বিশ্বের সমুদ্র উপকূলের দেশগুলো বিশেষ করে দ্বীপগুলোর পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে করণীয় নিয়ে এখনো অনেক বিতর্কের সমাধান হয়নি।
এ নিয়ে প্যারিস চুক্তিতে ‘খটকা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মালদ্বীপের পরিবেশবিষয়ক সাংবাদিক ও দেশটির প্রেসিডেন্টের সাবেক উপদেষ্টা মার্ক লিনাস।
কেন প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর হবে
১৯৯৭ সালে জাপানের কিয়োটোতে ‘কিয়োটো প্রটোকল’ হয়েছিল। ওই চুক্তিতে ১২৯টি দেশ সমর্থন দিয়েছিল। তবে ওই চুক্তি থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় কানাডা। এরপর প্যারিস চুক্তিই প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার সমাধান বিশ্বনেতারা সমর্থন দিল।
প্যারিস চুক্তির ভিন্নতা
অন্য চুক্তিগুলোর চেয়ে প্যারিস চুক্তির প্রধান পার্থক্য হচ্ছে এর সময়কাল বেশি। এতে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর ২০২০ সালের মধ্যে চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়া দেশগুলোকে কার্বন নির্গমন নির্দিষ্ট সীমায় নামাতে হবে।
এই চুক্তির ভিত্তিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ ও প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করবে ধনী দেশগুলো।
কোনো কিছু পরিবর্তন করা হবে?
বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ রাখতে এই চুক্তি মূলত একটি আইনগত ভিত্তি। এর মাধ্যমে যেসব দেশ তাদের লক্ষ্য পূরণ না করতে পারবে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
তবে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এই চুক্তিকে দুর্বল ও বিলম্বিত বলে মনে করছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রক্ষেপণ
২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের গড় উষ্ণতার প্রক্ষেপণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোনো দেশ বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে কাজ না করে তাহলে ২১০০ সালে বিশ্বের উষ্ণতা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছাবে। বর্তমান নীতিতে চলতে এই সময়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আর যদি প্যারিস চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করা হয়, তাহলে ২১০০ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বিশ্বের উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব।
কার্বণ নির্গমণের প্রক্ষেপণ
নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ সাময়িকীর তথ্যমতে, চলতি বছর জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমেছে দশমিক ৬ শতাংশ। তবে ২০১৪ সালে একই পরিমাণ বাড়ে। ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর বার্ষিক ২-৩ শতাংশ হারে বিশ্বে কার্বন নির্গমন বেড়েছে। তবে এই সময়ে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর ছিল। ২০১৪-১৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ শতাংশ হারে।