মাসে আইএসের আয় ৬২৫ কোটি টাকা!
অর্থের প্রাচুর্যের কারণেই দিন দিন বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস)। আর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশগুলোর সিরিয়ায় বিমান হামলা চালানোর একটি বড় কারণ জঙ্গি সংগঠনটির অর্থের প্রবাহ বন্ধ করা। এ জন্যই সিরিয়ায় আইএসের দখলে থাকা তেলক্ষেত্রসহ তেলের ট্রাকগুলো প্রায়শই বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এমনটাই জানানো হয়েছে বিজনেস ইনসাইডার ও টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে গবেষণা সংস্থা আইএইচএসের একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, এই অবাধ অর্থের প্রবাহের কারণেই আইএস অন্য ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর তুলনায় বেশি সাফল্য পেয়েছে। আইএইচএস জানিয়েছে সব মিলিয়ে প্রতি মাসেই আইএসের রোজগার ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, তেলক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতি মাসে আইএসের রোজগার ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বছরে ৬০০ মিলিয়ন ডলারেও পৌঁছে। আর এই তেলক্ষেত্র থেকে আয়ের পরিমাণ আইএসের মোট আয়ের ৪৩ শতাংশ।
জঙ্গি সংগঠনটির আয়ের বাকি অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা, ধনী ব্যক্তির অনুদান এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ধনী ব্যক্তিদের অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে। এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, আইএস ২০১৪ সালে কেবল মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে অন্ততপক্ষে দুই কোটি ডলার আয় করে। ২০১৫ সালে এসে এই পরিমাণ আরো তিনগুণ হয়েছে বলেও সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডাকাতি, লুট -চাঁদাবাজি, ধর্মী সংখ্যালঘুদের ওপর কর এবং নারী দাসী বিক্রি করেও এই জঙ্গি সংগঠনটি টাকা আয় করে থাকে। মার্কিন অর্থ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বিজনেস ইনসাইডার জানায়, আইএস তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার জনগণকে জোরপূর্বক চাঁদা দিতে বাধ্য করিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ ডলার আয় করে। যারা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে, বা সেখানে ব্যবসা করে বা শুধু বসবাস করে, তাদের কাছ থেকে ‘নিরাপত্তা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া আইএস ব্যাংক লুট করে, গবাদি পশু চুরি করে এবং পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করে অর্থ উপার্জন করে। সিরিয়ার বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চুরি করে বিক্রি করাও আইএসের অর্থের একটি উৎস।
এ ছাড়া আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ধর্মী সংখ্যালঘুদের ‘জিজিয়া’ নামে একটি বিশেষ কর দিতে হয়। গত বছর ইরাকের মসুল শহরে মসজিদগুলোতে একটি ঘোষণা পড়া হয়, যেখানে খ্রিস্টানদের বলা হয় মুসলমান হয়ে যেতে, নয়তো ‘জিজিয়া’ কর দিতে। শহর ছেড়ে না চলে গেলে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
স্থানীয় ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের তথ্য অনুযায়ী, যখন আইএস ইরাকের উত্তরে সিনজার শহর দখল করে, তখন তারা হাজার হাজার ইয়াজিদি নারী এবং যুবতী মেয়েকে বন্দি করে এবং তাদের অনেককে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করে।