হাসপাতালের ভুলে বদলে যাওয়া দুই জীবন

Looks like you've blocked notifications!

কোনো সিনেমা বা নাটকের গল্প নয় এটি। যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে একই সময়ে জন্ম নিয়ে অদলবদলের শিকার দুটি জীবনের সত্যি ঘটনা।
ঘটনাটি ঘটে প্রায় আট দশক আগে, নটিংহাম হাসপাতালে। ১৯৩৬ সালে ফ্রান্সের দুটি পরিবারের মধ্যে মেয়েশিশু দুটি এ দুর্ঘটনার শিকার হয়। জন্মের পরই ধাত্রীকক্ষ থেকে হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ শিশু দুটিকে ভুল মা-বাবার কাছে পাঠায়।

ভুলটি শনাক্ত হয় এর ২০ বছর পর। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় দোষ চাপিয়েছিল সে সময় পালাক্রমে দায়িত্বরত নার্সদের ওপর। সেই ভুলের এত দিন পর সম্প্রতি ২০ লাখ ইউরোর বেশি ক্ষতিপূরণ পেয়েছে ওই পরিবার দুটি।

মেয়েশিশু দুটির একজন ভ্যালেরি হাইল্যাত, আরেক জন পেগি উইলার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে উইলার পরিবারের সন্তান পেগি বেড়ে উঠেছিলেন হাইল্যাত পরিবারে আর হাইল্যাত পরিবারের সন্তান ভ্যালেরির শৈশব-কৈশোর কাটে উইলার পরিবারে।
সম্প্রতি বিবিসি রেডিওর একটি অনুষ্ঠানে বর্তমানে ৭৮ বছর বয়সি হাইল্যাত ঘটনাটির বর্ণনা দেন। তিনি জানান, একেবারে শুরু থেকেই মার্গারেট উইলারের সন্দেহ ছিল যে শিশুটিকে নিয়ে তিনি বাড়ি এসেছেন সেটি (হাইল্যাত) তাঁর মেয়ে নয়।

রেডিও অনুষ্ঠানে ভ্যালেরি বলেন, ‘অপরিণত অবস্থায় আমার জন্ম হয়েছিল। জন্মের পর আমার নখগুলো ঠিকভাবে বেড়ে ওঠেনি। কিন্তু উনি (মার্গারেট উইলার) জানতেন তিনি একটি পরিণত শিশুর জন্ম দিয়েছেন। আর পেগি ছিল তার দ্বিতীয় সন্তান। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর শিশুটি আকারে বড় ছিল।’

 

আর তাই মার্গারেট হাইল্যাত পরিবারের বিরক্তি সত্ত্বেও প্রায়ই পেগিকে দেখতে যেতেন। জন্মপরিচয় নিশ্চিত করতে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছেও। তখনো ডিএনএ পরীক্ষাসহ জন্ম জন্মপরিচয় শনাক্তকরণের পরীক্ষাগুলো সহজলভ্য হয়নি। আর চিকিৎসকরা বারবার তাঁকে বলেছিলেন- তিনি ভুল করছেন। তবু একজন মা হিসেবে নিজের বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন তিনি।

যতবার পেগিকে দেখতে যেতেন ততবারই মার্গারেট গভীরভাবে অনুভব করতেন, পেগি আসলে তাঁরই সন্তান। এভাবে এক সময় ভ্যালেরিকে জবরদস্তিকারী হিসেবে ভাবতে শুরু করলেন তিনি। ভ্যালেরি যখন এসব কথা জানতে পারেন, তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। ভ্যালেরি বলেন, ‘এমন ভাবনায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি মাত্র একবার কথাটি বলেছিলেন। তবে তিনি সন্তান হিসেবে আমার যত্ন করতে কখনো কার্পণ্য করেননি।’

এদিকে, প্যাগি তার মেয়ে নয় এই কথা ফ্রেদ হাইল্যাত কখনো বিশ্বাস করতেন না। এ ছাড়া তিনি এসব বলে তাঁর স্ত্রী ব্লঁশকে কষ্ট দিতে চাননি। তাই তিনি মার্গারেটের অনুরোধ সত্ত্বেও পেগির বয়স ছয় কিংবা সাত বছর বয়সে তাকে রক্ত পরীক্ষা করানোর অনুমতি দেননি।

তবে যতই মেয়ে দুটি বড় হচ্ছিল, ততই তাদের চেহারা ও আচরণের কারণে পরিবারের ভেতরও সন্দেহ বাড়ছিল। ভ্যালেরি ও পেগি দুজনেরই ছিল তাদের জন্মদাত্রী মায়ের চেহারার সাথে স্পষ্ট মিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালের দিকে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় ভ্যালেরি ও পেগির বদলে যাওয়ার ব্যাপারটি। তত দিনে হাইল্যাত ও উইলার পরিবার দুটির মধ্যে একটি আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়, যা বজায় আছে এখনো।
আর তাই বিবিসি রেডিওর অনুষ্ঠানে পেগির সন্তান ম্যাদলেন বলেন, তাঁর আসলে ছয়জন দাদা-দাদি আর নানা-নানি। মায়ের পক্ষে চার আর বাবার পক্ষে দুজন।