বিক্ষোভে উত্তাল হরিয়ানায় নিহত ১০, সেনা মোতায়েন

Looks like you've blocked notifications!
সংঘর্ষ চলাকালীন জিন্দের বুদ্ধখেরা রেলস্টেশনে জাঠদের ভাঙচুর চালানোর দৃশ্য। ছবি : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সরকারি চাকরিতে কোটার দাবিতে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে জাঠ সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ ও সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫০ জন।

সরকারি চাকরিতে কোটার দাবিতে হরিয়ানার জাঠ সম্প্রদায় এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছে। গতকাল শনিবার এই বিক্ষোভে সহিংসতায় দুই জাঠ তরুণ নিহত হওয়ার পর আজ সকাল থেকে আরো সহিংস হয়ে ওঠে বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে হরিয়ানার ১১টি জেলায়। জিন্দের বুদ্ধখেরা রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ওই আগুনে নষ্ট হয়ে গেছে সিগন্যাল প্যানেল। ফলে ব্যাহত হচ্ছে রেল পরিষেবা।

হরিয়ানার বিভিন্ন স্টেশনেও শুরু হয়েছে অবরোধ। এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে ১৫০টি ট্রেনের যাত্রা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে হরিয়ানা রোডওয়ের একটি বাসে।

হরিয়ানার মধ্যে দিয়ে যাওয়া ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বিক্ষোভকারীরা। অবরোধের জেরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। বন্ধ হয়ে পড়েছে রোহতক, জিন্দ, ভিওয়ানি ও হরিয়ানার অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ।

শুধু হরিয়ানায় নয়, এই বিক্ষোভ দেশটির রাজধানী দিল্লিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। দিল্লির বাহাদুরগড় সড়ক, ন্যানগ্লুই মেট্রো স্টেশনের কাছের সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারী। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আন্দোলনকারীদের সমর্থনে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। দিল্লির লাগোয়া গুরগাঁও, সিরসাসহ সংলগ্ন এলাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল-কলেজ। গতকাল শনিবার বিক্ষোভের জেরে স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করেছে হরিয়ানা সরকার।

হরিয়ানার বেশ কয়েকটি জেলায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। আন্দোলনকারীরা হরিয়ানার মুনক ক্যানেলের অদিসে চড়াও হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পানি সরবরাহ। এই ক্যানাল দিয়েই পানি সরবরাহ হয় নয়াদিল্লিতে। ফলে আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হলে রাজধানী দিল্লির পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত শুক্রবার রাত থেকেই হরিয়ানার রোহতক ও ভিওয়ানিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উত্তাল এই পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আন্দোলনকারীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভুপিন্দর সিং হুডা। জাঠ আন্দোলনের জেরে সংরক্ষণ বিল আনার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার।

পরিস্থিতি অনুকূলে না হলেও খুব শিগগির এই বিক্ষোভ প্রশমন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে রাজ্যটির সরকার। অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) আওতাভুক্ত এবং সরকারি চাকরিতে কোটার দাবি নিয়ে জাঠ নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকেই আজ রোববার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওবিসি কোটা বিল হরিয়ানার বিধানসভায় তোলা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাঠ সম্প্রদায়ের উচ্চপদস্থ নেতা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান ও দিল্লি পুলিশ কমিশনারের মধ্যে এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকের পর বিজেপি নেতা অনিল জেইন বলেন, এক জ্যেষ্ঠ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটি জাঠদের দাবি নিয়ে কাজ করবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে একটি বিল হরিয়ানা বিধানসভায় উত্থাপন করা হবে।

এ ছাড়া এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লিতে পানি সরবরাহে কোন ব্যাঘাত ঘটবে না- কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে হরিয়ানা সরকারকে নিশ্চিত করতে বলেছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, এই পরিস্থিতি খুব শিগগির স্বাভাবিক হবে এবং সড়কগুলোতেও যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। এদিকে বিক্ষোভ প্রাণহানির পর দমনে হরিয়ানায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে চলছে সেনাবাহিনীর ফ্লাগমার্চ।

সম্প্রতি জাঠ সম্প্রদায়কে অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) আওতাভুক্ত করে বিশেষ সুবিধা দেওয়া ও রোজগারের ভিত্তিতে আলাদাভাবে আরো ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় হরিয়ানা সরকার। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। ওবিসি কমিশনের দায়ের করা মামলায় জাঠদের কোটা সংরক্ষণের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আর জাঠদের আর্থিক সুবিধা সংরক্ষণের ওপর স্থগিতাদেশও জারি করেন হাইকোর্ট। এর প্রতিবাদেই জ্বলে উঠেছে জাঠরা।