তিন লাখের বেশি অভিবাসী নিচ্ছে কানাডা!

Looks like you've blocked notifications!
কানাডার সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অভিবাসনবিষয়ক চলতি বছরের পরিকল্পনা। ছবি : ওয়েবসাইটের ক্রিনশট

কানাডায় চলতি বছর তিন লাখের বেশি মানুষ অভিবাসনের সুযোগ পাচ্ছে। অর্থনীতি, পরিবার, শরণার্থী ও মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে এসব মানুষ নেওয়া হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকেই কানাডায় অভিবাসনের জন্য আবেদন করা যাচ্ছে। সম্প্রতি কানাডা সরকারঘোষিত চলতি বছরের অভিবাসন পরিকল্পনায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

কানাডার সরকারি ওয়েবসাইটে (www.canada.ca) তিন লাখের বেশি মানুষকে অভিবাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওয়েবসাইটের তথ্যে বলা হয়েছে, কানাডায় গত বছর দুই লাখ ৭৯ হাজার ২০০ অভিবাসী নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর অভিবাসী নেওয়ার লক্ষ্য তিন লাখ।

তবে দুই লাখ ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ পাঁচ হাজার মানুষ নেওয়া হতে পারে। বিভিন্ন সূত্রে এই সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে। এই হিসেবে কানাডায় অভিবাসী নেওয়ার হার বাড়ছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি বছর তিন লাখ মানুষের মধ্যে কানাডার অর্থনীতির স্বার্থে নেওয়া হবে সর্বাধিক এক লাখ ৬০ হাজার ৬০০ জন। এ ছাড়া পরিবার হিসেবে নেবে ৮০ হাজার, শরণার্থী ৫৫ হাজার ৮০০ এবং মানবিক সহায়তা হিসেবে তিন হাজার ৬০০ জন। তবে অভিবাসী সাড়ে তিন লাখ নেওয়া হলে স্বভাবতই সব ক্ষেত্রে এই সংখ্যা বাড়বে। আর কানাডার প্রদেশগুলোর মধ্যে কুইবেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী নেওয়া হবে।

অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী এবং Worldwide Migration Consultants ltd. চেয়ারম্যান ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে কানাডায় কয়েক হাজার পেশাজীবী, বিনিয়োগকারী কানাডায় অভিবাসনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে অভিবাসন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তায় যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। উল্লেখ্য, কানাডায় অভিবাসন আবেদনের যোগ্যতার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য ফ্রি অ্যাসেসমেন্ট করে থাকেন ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ।

কানাডায় অভিবাসন আবেদনের কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ‘আগে এলে আগে পাবেন’ (ফাস্ট কাম-ফাস্ট সার্ভ) এমন ভিত্তিতে কানাডার অভিবাসন আবেদন যাচাই করা হবে। তাই আগ্রহীরা যত দ্রুত আবেদন করবেন ততই দ্রুত কানাডা সরকার থেকে উত্তর পাবেন।

ভাষাগত দক্ষতা

ভাষাগত দক্ষতা কানাডায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দেশটিতে ভাষাগত দক্ষতা মাপার ব্যবস্থা হলো  ক্যানাডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ বেঞ্চমার্ক বা সিএলবি। অভিবাসন প্রোগ্রামের ভিন্নতায় সিএলবির সর্বনিম্ন পয়েন্টে ৪ থেকে ৭ পর্যন্ত হতে পারে।

সিএলবি সঙ্গে আইইএলটিএসের (IELTS)-এর সম্পর্ক

এ ছাড়া ভাষাগত দক্ষতার বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে সিএলবির সম্পর্কে জানা যাবে কানাডা সরকারের এই ওয়েব ঠিকানায়

এ ছাড়া পেশাগতভাবে কানাডায় অভিবাসন পেতে নির্দিষ্ট পেশার দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কানাডার সরকার সব পেশার দক্ষতাকে শূন্য (০), ইংরেজি এ (A), বি (B), সি (C), ডি (D) এই পাঁচটি ধরনে ভাগ করেছে। নির্দিষ্ট পেশা এবং ওই পেশার দক্ষতা সম্পর্কে জানতে কানাডার সরকারি ওয়েবসাইটের এই ঠিকানায় যান।

এক্সপ্রেস এন্ট্রি (Express  Entry):  

নির্দিষ্ট কাজে অভিজ্ঞদের কানাডায় অভিবাসনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। অভিজ্ঞদের কানাডায় অভিবাসন আবেদন করার নতুন পদ্ধতি হলো এক্সপ্রেস এন্ট্রি। এক্সপ্রেস এন্টির আওতায় তিনটি প্রোগ্রামে আবেদন করা যাবে, ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম, ফেডারেল স্কিলড ট্রেডার্স প্রোগ্রাম ও কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স এন্ট্রি। এ সম্পর্কে জানা যাবে এই ঠিকানায়

ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম : ভাষাগত দক্ষতা যাচাই হয় চারটি ক্ষেত্রে বলা পড়া, লেখা, শোনা, বলা। এই প্রোগ্রামে ইংরেজি বা ফরাসি ভাষার চারটি ক্ষেত্রেই ন্যূনতম সিএলবি ৭ পেতে হবে। ইংরেজির ক্ষেত্রে এটি আইইএলটিএস পয়েন্ট ৬-এর সমান। আর পয়েন্টের তালিকায় দ্বিতীয় ভাষার ক্ষেত্রে নম্বর পেতে নির্দিষ্ট ভাষায় ৫ পেতে হবে। কোনো কাজে সর্বনিম্ন এক বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কাজের ক্ষেত্র হবে কানাডার সরকার ঘোষিত কাজের বিবরণীর শূন্য, ‘এ’ অথবা ‘বি’ ধরনের। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই ঠিকানায়

এ ছাড়া এই প্রোগ্রামে ছয়টি বিষয়ের ওপর কানাডায় অভিবাসনের আবেদন করার যোগ্যতা নির্ভর করে। বিষয়গুলোর প্রতিটিতে নির্দিষ্ট পয়েন্ট থাকে। এগুলো হলো শিক্ষা (২৫), ভাষায় দক্ষতা (২৮), কাজের অভিজ্ঞতা (১৫), বয়স (১২), কাজ পাওয়া (১০) এবং কানাডায় মানিয়ে নেওয়া (১০)। বিষয়গুলোতে বরাদ্দকৃত মোট পয়েন্ট দাঁড়ায় ১০০। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ৬৭ পেতে হবে। এর কম পেলে আবেদন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানুন এই ঠিকানায়

ফেডারেল স্কিলড ট্রেডার্স প্রোগ্রাম : ইংরেজি অথবা ফরাসি ভাষার মধ্যে যে কোনো একটি বলা ও শোনার দক্ষতা সিএলবি ৫ হতে হবে। একই ভাষায় পড়া ও লেখায় ন্যূনতম সিএলবি ৪ পেতে হবে। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর এই কাজের অভিজ্ঞতা হতে হবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে। পেশাগত দক্ষতার ধরন হতে হবে বি ক্যাটাগরির। বিস্তারিত জানুন এই ঠিকানায়

কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স এন্ট্রি : কানাডায় ন্যূনতম ১২ মাস অবস্থান করেছে এমন ব্যক্তিরা এই শ্রেণিতে আবেদন করতে পারবেন। নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা এবং ওই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাগত দক্ষতা প্রয়োজন। এই প্রোগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই ঠিকানায়

এক্সপ্রেস এন্ট্রি ছাড়াও কানাডার অভিবাসন নেওয়ার অপর প্রোগ্রামগুলো হলো :

প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম : দুই পদ্ধতিতে এই আবেদন করা যায়। সরাসরি কাগজেকলমে অথবা এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে। কানাডার নির্দিষ্ট কোনো প্রদেশের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেখানে থাকা কাজের সুযোগ সম্পর্কে জানা ও আবেদন। পরে ওই প্রদেশ থেকে কাজের সুযোগ থাকা সাপেক্ষে অনুমোদন পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানুন এই ঠিকানায়

ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ : কানাডার স্থায়ী নাগরিক এবং কমপক্ষে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়স্ক হলে দেশের বাইরে থাকা কোনো আত্মীয়কে কানাডায় স্পন্সর করা যাবে। নির্দিষ্ট স্বজন কানাডার পূর্ণ নাগরিকত্ব পেলে সেখানে বসবাস, পড়ালেখা ও কাজ করতে পারবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন

সেলফ এমপ্লয়েড : কানাডায় স্বনির্ভরভাবে কাজ করতে চায় এমন ব্যক্তিরা এই প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন করতে পারবেন। ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার প্রোগ্রামের কাজ খোঁজা ছাড়া বাকি পাঁচটি বিষয়ে দক্ষতাই এই প্রোগ্রামের যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। আর কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা থাকতে হবে। বিস্তারিত জানতে কানাডা সরকারের নির্দিষ্ট ওয়েব ঠিকানায় যান।

অভিবাসনের আবেদনের আগে জানা প্রয়োজন  

কানাডায় সর্বাধিক অভিবাসন দেওয়া হবে যোগ্য ও পেশায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের। তবে সব সার্টিফিকেট ও সনদ যাচাই বাছাই হয়। তাই পেশা ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে যাঁরা কানাডায় অভিবাসন পেতে চান, তাঁরা আগে থেকেই নিজের যোগ্যতা যাচাই করে নিতে পারেন যাকে বলা হয়, ট্রেড স্কিল এসেসমেন্ট সার্টিফিকেট। পেশাজীবী হিসেবে কানাডায় অভিবাসন আবেদনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রভিনশিয়াল নমিনেশন। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রদেশে ওই পেশার মানুষ প্রয়োজন কি না এবং কোনো প্রতিষ্ঠান এমন পেশার লোক নেবে কি না তা জানা এবং ছাড়পত্র আনা। দুটি বিষয়ই অভিজ্ঞ আইনজীবীদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়।

অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পেশায় অবেদনকারীদের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতার সব অনুলিপি, পেশাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতার সনদ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সনদসহ সব বৃত্তান্ত দিতে হবে।

কুইবেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে অনেক অভিবাসী নেওয়া হবে। এর মধ্যে শুধু বিনিয়োগকারী হিসেবে দুটি প্রোগ্রামের আওতায় অনেক অভিবাসী নেওয়া হবে। কুইবেকে অভিবাসনের আবেদন করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে এই ঠিকানায় যান।

আইআইপি প্রোগ্রাম : ১৬ লাখ কানাডিয়ান ডলারের (নয় কোটি ৫৯ লাখ টাকা) সমপরিমাণ সম্পত্তি থাকতে হবে এবং আট হাজার কানাডিয়ান ডলার (চার কোটি ৭৯ লাখ টাকা) পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এই ঠিকানায়

এন্টারপ্রেনার প্রোগ্রাম : তিন লাখ কানাডিয়ান ডলারের (এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা) সম্পদ থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে আবেদনকারীকে কোনো ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ন্যূনতম এক বছর। বিস্তারিত জানুন এই ঠিকানায়।