১৯ এপ্রিল ফিরছেন ‘নিখোঁজ’ রাহুল গান্ধী

মাসখানেক ধরেই কোনো খোঁজখবর নেই ভারতের রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধীর। এই ‘নিখোঁজ রাহুলের’ সন্ধানে গত সপ্তাহে তাঁর নির্বাচনী এলাকা আমেথির বুলন্দ শহর এলাকাসহ উত্তর প্রদেশের আরো কয়েকটি স্থানে পোস্টার দেখা গেছে। যে রাহুলের খোঁজ দিতে পারবে, তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে উল্লেখ ছিল ওই পোস্টারে।
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে চলেছে হাসিঠাট্টা। কয়েকটি পত্রিকা এবং অনলাইন ছেপেছে বিদ্রূপাত্মক কার্টুন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, যার একটির ভাবার্থ ছিল এমন, হিমালয়ের নির্জন পাহাড়চূড়ায় কংগ্রেসের সুদিন ফিরিয়ে আনতে তপস্যায় মগ্ন রাহুল। তপস্যা শেষেই ফিরে আসবেন জনতার মাঝে।
এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দেশটির সংসদে গুরুত্বপূর্ণ বাজেট ও জমি অধিগ্রহণ বিলের উপস্থাপন শুরু থেকে কিছুদিন ধরে অনুপস্থিত ছিলেন রাহুল। উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ ও বুলন্দ শহর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝোলানো পোস্টারে বলা হয়, দূরদৃষ্টির অভাবে কংগ্রেসের এই নেতা সংসদের বাজেট সেশনে অনুপস্থিত থাকতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
দেশজুড়ে এ নিয়ে কানাকানি যখন তুঙ্গে, এরই মধ্যে গতকাল সোমবার কংগ্রেসের মুখপাত্র আসাম রাজ্যের শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব জানালেন, ‘ছুটির’ পর প্রকাশ্যে আসছেন কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধী। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের তুমুল সমালোচিত জমি অধিগ্রহণ বিলের বিরুদ্ধে ১৯ এপ্রিল দিল্লিতে কংগ্রেসের কৃষক সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন রাহুল।
২০ এপ্রিল ভারতের পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশনের ২য় পর্ব শুরু হবে। সেখানে রাহুলের উপস্থিত থাকার কথা আছে।
কংগ্রেসের আয়োজনে ওই কৃষক সমাবেশে অবশ্য কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীসহ দলের শীর্ষ নেতারাও বক্তব্য রাখবেন। এর আগে গত সপ্তাহে সোনিয়া জানিয়েছিলেন, শিগগিরই মানুষের মাঝে ফিরে আসবেন রাহুল। আর তাঁর হাত ধরেই কংগ্রেস ফিরে যাবে গণমানুষের কাছে। সেই ফিরে আসার মঞ্চটি গড়ে দিতেই এই কৃষক সভা হচ্ছে বলে খবর ছেপেছে ইন্ডিয়া টুডে।
এদিকে, জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রী নিতিন গড়করির পাঠানো এক চিঠির জবাবে সোনিয়া বলেছিলেন, ‘এটা গণতন্ত্রের নামে এক ধরনের প্রহসন। এই বিল সম্পূর্ণ কৃষকবিরোধী। সংসদকে এড়িয়ে অধ্যাদেশ এনে এই সরকার কৃষি ও কৃষকবিরোধী মানসিকতারই পরিচয় রেখেছে।’ কংগ্রেস নেত্রী এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সোনিয়া গান্ধীর কথার জবাবে এক টিভি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘এই বিল কৃষকবিরোধী বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা আসলে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না। কৃষকদের গরিব করে রাখার চক্রান্ত। এই ষড়যন্ত্র আসলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া মাত্র।’ দেশ, কৃষকদের বাঁচাতে চক্রান্তের বিরোধিতা করার জন্য অনুষ্ঠানে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রচারের পর পরই কংগ্রেস এ দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
আর মোদির এই আহ্বানে কতটুকু কাজ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে এনডিএ জোটের সদস্যদের মনেই। সংসদ ভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে যন্তরমন্তর ময়দানে এরই মধ্যে প্রবীণ গান্ধীবাদী নেতা আন্না হাজারে ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালসহ তাঁর আম আদমি শিষ্যরা ধরনা দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মোদির এনডিএ জোটের কয়েকজন শরিকও। গত মাসেই আন্না হাজারের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘও (আরএসএস)।
এদিকে, জমি বাঁচাও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ‘নিখোঁজ’ রাহুলের ‘খোঁজ’ দিল কংগ্রেসও। রাজনীতির এ পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের চোখে নরেন্দ্র মোদির ‘ক্যারিশমাটিক’ সরকার কী করে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।