কাজ না করলে টাকা নয়, সুইস জনগণের রায়
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাগরিকদের মৌলিক আয়ের নিশ্চয়তা চালু করা হবে কি না, এ বিষয়ে একটি আয় নিশ্চয়তার প্রস্তাব রোববার গণভোটে নাকচ করেছেন সুইস ভোটাররা। সম্পদ বৈষম্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পাওয়া নিয়ে তীব্র বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের কোনো দেশে এমন বিষয়ে এই প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হলো।
বিবিসি জানায়, সুইজারল্যান্ডে নাগরিকদের মৌলিক আয়ের প্রস্তাবে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে দুই হাজার ৫০০ সুইস ফ্রাঙ্ক বা দুই হাজার ৫৫৫ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি দুই লাখ ৮৮২ টাকা) দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কোনো সুইস নাগরিক কাজ না করলেও এই অর্থ পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল এ পরিকল্পনায়। কিন্তু মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত গণভোটে ৭৭ শতাংশ সুইস নাগরিক এ পরিকল্পনার বিপক্ষে ভোট দেন।
সুইজারল্যান্ডে মৌলিক আয়সহ মোট পাঁচটি প্রস্তাবে এই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারের মৌলিক আয় প্রস্তাবে অবস্থান নেওয়া সুইস নাগরিকদের যুক্তি হচ্ছে, একবিংশ শতাব্দীতে অধিকাংশ কাজই যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে কাজের সুযোগ কমেছে। তবে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এমন প্রস্তাবের পক্ষে আছেন মাত্র এক-চতুর্থাংশ সুইস নাগরিক। আর সুইজারল্যান্ডের পার্লামেন্টের কোনো দলই প্রস্তাবটির পক্ষে পুরোপুরি সমর্থন দেয়নি।
সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, প্রস্তাবিত পরিকল্পনা পাস হলে কাজ করা এবং আয় করা এ পদ্ধতির ক্ষতি হবে। তবে এমন দর্শনের ঘোর বিরোধী প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেওয়া সংগঠন বেসিক ইনকাম সুইজারল্যান্ডের নেতা চে ওয়াগনার। তিনি দাবি করেন, একদম বিনাশ্রমে অর্থ নেওয়া হচ্ছে না।
চে ওয়াগনার বলেন, সুইজারল্যান্ডের ৫০ শতাংশ কাজেই কোনো অর্থ দেওয়া হয়। এই কাজগুলো সেবামূলক। মৌলিক আয় নিশ্চিত হলে এই কাজগুলোর মূল্যায়ন হবে।
তবে চে ওয়াগনারের ব্যাখ্যার বিরোধিতা করেন সুইস পিপলস পার্টির নেতা লুজি স্ট্যাম। তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ড কোনো দ্বীপ হলে মৌলিক আয়ের বিষয়টি সম্ভব ছিল। কিন্তু উন্মুক্ত সীমান্তের দেশে এমন বিষয় বাস্তবায়ন পুরোপুরি অসম্ভব। আর দেশটিতে জীবনযাত্রার মানও উন্নত।
লুজি স্ট্যাম আরো বলেন, বিনা পরিশ্রমে কয়েক হাজার সুইস মুদ্রা দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়িত হলে সুইজারল্যান্ডে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করবে শতকোটি মানুষ।
বিবিসি জানায়, সুইজারল্যান্ডের মতোই মৌলিক আয় বিষয়ে পরিকল্পনা চলছে ফিনল্যান্ডে। সেখানে আট হাজার দরিদ্র মানুষের জন্য মৌলিক আয় হিসেবে অর্থ বরাদ্দের কথা ভাবা হচ্ছে। আর নেদারল্যান্ডসের উটরেচ শহরে মৌলিক আয়ের বিষয়ে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হবে ২০১৭ সালে।