আটক মা-বাবা শেষ বার দেখলেন সন্তানকে
হাসপাতালের বিছানায় ছয় মাস বয়সী দিনাহ পাইগে হোয়াটেডের নিথর শরীরটা পড়ে আছে। নিজেদের সন্তানকে নির্যাতন করার অভিযোগে আটক রয়েছেন তার মা-বাবা। দিনাহকে শেষবারের মতো দেখানোর জন্য কারাগার থেকে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার জর্জিয়ার একটি হাসপাতালে এই হতভাগ্য শিশুটির লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়েছে। সেদিন শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছে শিশুটি।
দিনাহের বাবা জাস্টিন হোয়াটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২৩ এপ্রিল তিনি দিনাহকে নির্যাতন করেছেন। এ কারণে তার ছোট্ট দেহের হাড় ভেঙে গেছে এবং মস্তিক্ষে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আর তার মা জেমির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি তাঁর স্বামীকে থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, গত সোমবার ছোট্ট দিনাহর শরীর থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার আগে তাঁদের দুজনকে তাকে শেষবারের মতো দেখার অনুমতি দেওয়া হয়।
জাস্টিন ও জেমির বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁরা ১০ বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করছেন। মাদক ও পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে তাদের কলহ লেগেই থাকত।
জেমির মা আটলান্টা জার্নাল কনস্টিটিউশন পত্রিকাকে জানান, তাঁর মেয়ের কাছে মাদক ছিল। জেমিও স্বীকার করেছেন, চিকিৎসকেরই দেওয়া ব্যথানাশক ওষুধ তিনি খেয়েছিলেন।
জেমির মা আরো বলেন, জাস্টিনের বিরুদ্ধে মাদক নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি খুব রাগী।
তবে এই দম্পতির প্রতিবেশী ম্যারি স্ট্রং বলেন, ‘তাদের দেখে ভালো মানুষই মনে হয়েছিল। আমি কখনো তাদের ঝগড়া করতে দেখিনি।’
আদালতে পেশ করা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই পত্রিকা জানায়, গত ২৩ এপ্রিল সকালে জাস্টিন পুলিশকে ফোন দিয়ে জানান, ঘুম থেকে জেগে দেখেন তাঁর মেয়ে কান্না করছে এবং তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার ঠোঁট নীল হয়ে গেছিল, এক সময় সে শান্ত হয়ে যায়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর তদন্ত প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘আমি জাস্টিন ও জেমি হোয়াটেডের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি অনেকটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিলাম, তাদের মধ্যে কোনো আবেগ দেখতে পাইনি। জাস্টিনকে শান্ত ও নিরুদ্বেগ দেখতে পাই। আর জেমিকে আবেগহীনভাবে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।’
এক প্রতিবেশী জানান, চিকিৎসকদল এসে শিশুটিকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন তাকে দেখে মৃত মনে হয়।
চিকিৎসকরা নিশ্চিত হয়েছেন, দিনাহর মস্তিষ্ক আর কাজ করবে না। কয়েক মাস ধরে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তার বাবা লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার অনুমতি দিচ্ছিলেন না।
কারাগারে জাস্টিনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ করে চিকিৎসকরা জানান, বেঁচে থাকলেও দিনাহ কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে না। সে কখনো হাঁটতে পারবে না, কথা বলতে পারবে না এবং খেলতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত মা-বাবা সম্মতি নিয়ে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়। সে আর কখনোই ফিরবে না।