৫২ বছরের যুদ্ধ শেষে…
কলম্বিয়া সরকার আর বামপন্থী হিসেবে পরিচিত ফার্ক বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৫২ বছরের যুদ্ধ শেষে এই শান্তিচুক্তিটিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার কিউবার রাজধানী হাভানায় ফার্ক বিদ্রোহীদের প্রধান নেতাদের সঙ্গে কলম্বিয়া সরকারের এই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চার বছর ধরে হাভানায় এই শান্তিচুক্তি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছিল। তবে শেষ দুই বছরে ওই আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি অনলাইন।
কলম্বিয়ার পক্ষে আলোচক দলের প্রধান হামবেরতো দে লা কালে এবং ফার্ক বিদ্রোহীদের মধ্যস্থতাকারীদের প্রধান আইভান মারকুয়েজ কিউবায় এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
চুক্তিতে উভয় পক্ষই বংশানুক্রমিকভাবে যুদ্ধ করে যাওয়া বিদ্রোহীদের একটি সুস্থ সামাজিক পরিবেশের মধ্যে আনতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া এই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তাদের একটি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিবেশে ফিরিয়ে আনার কথাও রয়েছে ওই চুক্তিতে।
চূড়ান্ত এই শান্তিচুক্তির আগে ফার্ক বিদ্রোহীদের মূলধারার রাজনীতিতে সংযুক্ত করা এবং ভূমি সংস্কার নিয়ে আরেকটি চুক্তি হয়।
শান্তিচুক্তির পর কলম্বিয়ার পক্ষে আলোচকদলের প্রধান হামবেরতো দে লা কালে বলেন, ‘আমরা পেরেছি। এত বছরের সমস্যাসংকুল পথ পেরিয়ে একমত হতে পারা আমাদের জন্য বড় অর্জন।’ দে লা কালে আরো বলেন, ‘যুদ্ধ শেষে এটা আরেকটি নতুন শুরু। আমাদের দুই পক্ষকেই নতুন একটি সমবেত সমাজ গড়ে তুলতে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।’
মার্কসবাদের অনুসারী ফার্ক বিদ্রোহীরা ১৯৬৪ সাল থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করছেন। তাঁদের এই লড়াইয়ে দুই লাখ ২০ হাজার লোক নিহত হয়েছেন। আর বাস্তুহারা হয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। এঁদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।
আর তাই এই দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান মেনুয়েল সান্তোস এই শান্তিচুক্তিকে ‘দুঃখ, কষ্ট এবং মৃত্যুর শেষ-এর শুরু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে কলম্বিয়া সরকার এবং ফার্ক বিদ্রোহীদের পক্ষে মধ্যস্থতাকারীরা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছিল, একটি চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি আসছে। ২০১২ সালের নভেম্বরে হাভানায় ফার্কের সঙ্গে সরকারের শান্তি আলোচনা শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা একটি চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির চেষ্টা চালালেও এই বছরের শুরুতে আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। কিন্তু সম্প্রতি কিউবার সরাসরি হস্তক্ষেপে এই শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি আসে।
এদিকে শান্তিচুক্তির দৃশ্য কলম্বিয়ার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের পর জনতা বোগোতা শহরে কেন্দ্রস্থলে উল্লাসে মেতে ওঠে। সেখানে জনতার ‘পাজ’ লেখা একটি বিশালকায় বেলুন ওড়াতে দেখা যায়। কলম্বিয়ান ভাষায় পাজ অর্থ শান্তি।