কুমারীত্ব পরীক্ষা দিয়ে তবেই সেনাবাহিনীতে ভর্তি!

Looks like you've blocked notifications!
ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর নারী সেনা। ছবি : এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার নারীরা সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পেতে হলে তাঁকে অবশ্যই ‘কুমারীত্বের পরীক্ষায়’ উত্তীর্ণ হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক আহ্বানের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটিকে এমন জবাবই দিয়েছে দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষ।

ইন্দোনেশিয়া সেনাবাহিনীতে ১৯৫০ সাল থেকেই নারীদের নিয়োগের সময় সতীচ্ছদ পরীক্ষা করা হয়। গত বছর দেশটির পুলিশ বাহিনীতেও নিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়েদের ‘কুমারীত্ব’ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, যা বিশ্বে ব্যাপক সমালোচিত হয়।

চলতি বছর সেনাবাহিনীতে নিয়োগের আগে গত বৃহস্পতিবার এইচআরডব্লিউ পদ্ধতিটিকে ‘মানবতার অধঃপতন’ বলে আখ্যায়িত করে এটি বন্ধ করতে ইন্দোনেশিয়া সরকারে প্রতি আবারও আহ্বান জানায়। প্রতিষ্ঠানটি বলে, ‘এই নীতি নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও আক্রমণমূলক।’

ইন্দোনেশিয়ায় সেনা নিয়োগে নারীদের ক্ষেত্রে ‘টু ফিঙ্গার’ টেস্ট প্রচলিত রয়েছে। দেশটির সেনা সদস্য হতে হলে কিংবা কোনো সেনা কর্মকর্তাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে নারীদের এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে জানায় এইচআরডব্লিউ। মেয়েদের কুমারীত্ব যাচাইয়ের জন্য দুই আঙুলের ছাপ পরীক্ষা নারীর প্রতি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শামিল বলেও আখ্যায়িত করে মানবাধিকার সংস্থাটি।

জবাবে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী এইচআরডব্লিউর যুক্তির বিরুদ্ধে বলেছে, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ এটি এবং নতুন নিয়োগের জন্য এই নীতি মেনে চলা হবে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডব্লিউসহ যাঁরা আপত্তি করেছেন তাঁদের জানানো হয়, নীতিভ্রষ্ট মানুষ সেনাবাহিনীতে চলে আসলে তা বাহিনীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের এমন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনী।

দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ফুয়াদ বাসিয়া শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে আসা এসব প্রার্থীর (নারী) মানসিক অবস্থা জানা প্রয়োজন। যদি তাদের কুমারিত্ব না থাকে, যদি তারা দুশ্চরিত্রের হয়, তার মানে তাদের মানসিকতা ভালো নয়।’

ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ‘সেনাবাহিনীর শুরু থেকে এই পরীক্ষা করে আসা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী দুর্ঘটনাক্রমে তার কুমারিত্ব হারিয়েছে, নাকি সে যৌনতায় সক্রিয় ছিল।’ 

ফুয়াদ বাসিরা আরো বলেন, ‘আমরা এই পরীক্ষা চালিয়ে যাব। কারণ সেনাবাহিনীর সদস্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার মানসিকতা। শারীরিক ও বুদ্ধিগত যোগ্যতা দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রধান দ্বীপ জাভায় বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত কিংবা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এমন ১১ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার খবর জানায় এইচআরডব্লিউ। তাদের সবাইকে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কুমারীত্ব পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।

সাক্ষাৎকারদাতা প্রত্যেক নারীই জানান, ওই পরীক্ষা সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত বেদনাদায়ক, বিব্রতকর ও ক্ষত সৃষ্টিকারী।

মানবাধিকার সংগঠনটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ২০১৩ সালে সেনা নিয়োগে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক নারী বলেন, ‘পরীক্ষার সময় প্রচণ্ড অপদস্থ হচ্ছি বলে মনে হচ্ছিল আমার।’ তাঁর কুমারীত্ব পরীক্ষাকারী চিকিৎসক একজন পুরুষ ছিলেন জানিয়ে ওই নারী বলেন, “এটা দেখে আমি প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছিলাম। নারীসেনা নিয়োগে ‘কুমারীত্ব’ পরীক্ষা নিষ্ঠুর ও অমানবিক।”

এই বর্বর প্রথা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ওই নারী সেনা বলেন, ‘এই বর্বর প্রথায় আমরা ভুগেছি। আগামীতে যারা সেনাবাহিনীতে আসবে, তাঁদের যেন এই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে না হয়- সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনই।’