‘আমি হিন্দু, গরুর মাংস খেয়েছি, আবার খাব’
কথাগুলো প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজুর। আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় তাঁর ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমি হিন্দু, আমি গরুর মাংস খেয়েছি এবং আবার খাব। গরুর মাংস খাওয়ায় দোষের কিছু নেই। পৃথিবীর ৯০% মানুষ গরুর মাংস খায়। তারা কি সবাই পাপী? এবং আমি এটা বিশ্বাস করি না, গরু পবিত্র অথবা আমাদের মা। কীভাবে একটি পশু মানুষের মা হতে পারে? এ জন্যই আমি বলি, ৯০ শতাংশ ভারতীয়ই মূর্খ, মি. মুখতার আব্বাস নাকভিসহ।’
গরুর মাংস নিয়ে কাটজুর এই স্ট্যাটাসের ঘটনার সূত্রপাত গতকাল বৃহস্পতিবার। ভারতীয় গণমাধ্যম ‘আজতক’ আয়োজিত ‘মন্থন’ নামক অনুষ্ঠানে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি সে দেশের সংখ্যালঘুদের খাদ্যাভ্যাসে এক অভিনব পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘গরুর গোশত খেতে হলে পাকিস্তানে বা আরব দেশে চলে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মোদি সরকার দ্বৈত মনোভাব নিয়ে চলছে। সরকার সংখ্যালঘুদের কথা বলছে, কিন্তু বাজেটে ৫৬১ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্রে গরুর গোশত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গরিব মুসলমানদের জন্য মোদি সরকারের কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেই।’
আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এ অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি গরুর গোশত নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি একটি শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘যদি কেউ গরুর গোশত খেতে না পেয়ে মারা যায়, তাহলে তিনি পাকিস্তানে বা আরব দেশে চলে যান। তার এ দেশে কোনো জায়গা নেই। ভারতে গরুর গোশত পাওয়া যাবে না।’
ওয়াইসি এরপর পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘গোয়া অথবা কাশ্মীরে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী গরুর গোশত খেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকেও কি পাকিস্তানে পাঠানো হবে?’
অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের উপদেষ্টা সম্পাদক রাজদীপ সারদেশাই বলেন, ‘গোয়ায় বসবাসকারী খ্রিস্টান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের যেসব মানুষ গরুর গোশত খায়, তাদের কি পাকিস্তানে পাঠানো হবে?
এ দুটি প্রশ্ন আসার পর উপস্থাপক অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। ফলে মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভিকে এসব অপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়নি।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে জৈন সাধুসন্তদের এক সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘সারা দেশে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার জন্য ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করা হবে।’
এরপরই এনডিটিভির কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কন্ডেয় কাটজু বলেছিলেন, ‘গরুর গোশতে সস্তায় প্রোটিন পাওয়া যায়। ভারতের বহু মানুষ বিশেষ করে নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, কেরালাসহ কয়েকটি রাজ্যের অনেক মানুষ গরুর গোশত খেয়ে থাকেন। এসব জায়গায় গোশত বিক্রি নিষিদ্ধ নয়।’
বিচারপতি কাটজু তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন, ‘গরুর মাংস নিষিদ্ধ করা হলে অনগ্রসর, সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব দেখানোর জন্য বিশ্বে আমাদের উপহাসের পাত্র হতে হবে।’ মহারাষ্ট্রে গরু জবাই নিষিদ্ধ হওয়ায় অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন।
কাটজু বলেছেন, ‘আমি কয়েকবার গরুর গোশত খেয়েছি। যদিও আমি তা সাধারণত খাই না বিশেষ করে আমার স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন এবং অন্যান্য রক্ষণশীল হিন্দুদের সম্মানার্থে। কিন্তু যদি কোনো অনুষ্ঠানে খাওয়ার সুযোগ আসে, তাহলে আমি আবার খাব।’
কাটজু প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘আমি অন্যদের গরুর গোশত খেতে বাধ্য করছি না। তাহলে কেন অন্যরা আমাকে এ নিয়ে নিষেধ করবে? একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের খাওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।’ তিনি গরু জবাই নিষিদ্ধ করাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন। ডানপন্থীরা এই নিষিদ্ধের পেছনে থাকলেও এতে দেশের কোনো স্বার্থ নেই বলেও তিনি সাফ জানিয়েছেন।
অবশ্য কাটজুর নিন্দুকরা জানিয়েছেন, বিতর্কে জড়ানোই নাকি কাটজুর কাজ। গত বছর নিজের ব্লগে মহাত্মা গান্ধীকে ব্রিটিশদের এজেন্ট দাবি করে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর মতে, দেশের প্রভূত ক্ষতি করেছেন গান্ধী।
এরপর কাটজু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা নেই বলে আলোচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তি হিসেবে এতটাই অপরিণত যে তিনি ভারতের কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যই নন। তাঁর উচিত মুখ্যমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে আসীন হওয়ার আগে কিছুটা পরিণত হওয়ার চেষ্টা করা।
সর্বশেষ তিনি ভারতে বিচারপতি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এনেও আলোচিত হয়েছিলেন। কাটজুর দাবি, মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখার সময় বিচারপতি নিয়োগের দুর্নীতির এই নির্দিষ্ট বিষয়টি তাঁর মনে হয়েছে সবাইকে জানানো উচিত।