ফিদেল স্মরণে ভাস্কর্য হবে না : রাউল

Looks like you've blocked notifications!
ফিদেলের শেষযাত্রায় হাজারো জনতার ভিড়। ছবি : বিবিসি

কিউবার বিপ্লবী নেতা ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল আলেসান্দ্রো কাস্ত্রো রুজকে তাঁর জন্মস্থান সান্তিয়াগোতে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন হাজারো মানুষ। কিউবান ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নেতারা এই বিদায়ী যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির বিপ্লবের জন্মভূমি বলে পরিচিত সান্তিয়াগো শহরে ফিদেলের দেহাবশেষ নিয়ে শেষযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁর ভাই কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো। শেষযাত্রায় দেওয়া এক ভাষণে তিনি তাঁর ভাইয়ের সমাজতান্ত্রিক নীতি আমৃত্যু চালিয়ে নেওয়ার শপথ করেন।

ভাইয়ের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে রাউল আরো ঘোষণা করেন, সদ্যবিদায়ী বিপ্লবী নেতা ফিদেলের অনুরোধে তাঁর নামে কিউবায় কখনো কোনো স্থাপনা অথবা ভাস্কর্য গড়া হবে না। তাঁর নামে রাস্তার নামকরণও নিষিদ্ধ করা হবে। রাউল জানান, তাঁর ভাই কঠোরভাবে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির উপাসনার বিরোধী ছিলেন।

এদিকে ১০ হাজারের বেশি কিউবান জনতা ফিদেলের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এ ছাড়া দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ফিদেলের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করছেন কোটি জনতা।

বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া, বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা। আরো রয়েছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ ও লুলা ডি সিলভা। যোগ দিয়েছেন রাউলের বন্ধু আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা দিয়েগো ম্যারাডোনাও।

রাউল জানিয়েছেন, পদযাত্রার পর কিউবার স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের জন্য নির্মিত সান্তা ইফিজেনিয়া সমাধিক্ষেত্রে ফিদেলকে শেষশয্যায় শায়িত করা হবে। এ সমাধিক্ষেত্রেই শায়িত আছেন ফিদেলের বন্ধু ও কিউবার স্বাধীনতা যুদ্ধের আরেক বিপ্লবী নেতা হোসে মার্টি।

এর আগে গতকাল শনিবার কিউবার বিপ্লবের অন্যতম এ নেতার শবাধার দেশটির রাজধানী হাভানা থেকে রওনা হয়ে পথে পথে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চার দিনের সফর শেষে সান্তিয়াগোতে পৌঁছায়।

সান্তিয়াগোতে পৌঁছানোর পর শহরটির রাস্তায় রাস্তায় জনগণ স্লোগান দেয়, ‘আমিই ফিদেল’, ‘ফিদেল চিরজীবী হোক’ বলে।

২০০৮ সালে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ৫০ বছর ধরে কিউবার শাসনক্ষমতায় ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেসে ভাষণ দেন বর্ষীয়ান এই নেতা। সে সময় তিনি বলেছিলেন, হয়তো তিনি শিগগিরই মারা যাবেন। কিন্তু বিপ্লব নিয়ে তাঁর পরিকল্পনাগুলো বেঁচে থাকবে। ওই ঘোষণার ঠিক সাত মাস পর সত্যি সত্যিই না-ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি এ নেতা।

স্থানীয় সময় গত ২৫ নভেম্বর, শুক্রবার দিবাগত রাতে কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ভাই ফিদেলের মৃত্যুসংবাদ জানান। রাউল জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা গেছেন কিউবার বিপ্লবের কমান্ডার ইন চিফ।

ফিদেল আলেসান্দ্রো কাস্ত্রো রুজের জন্ম ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট। ১৯৫৯ সালে তিনি মার্কিন সমর্থিত একনায়ক ফুলগেন্সিও বাতিস্তার সরকারকে উৎখাত করেন। বাতিস্তা সরকারকে উচ্ছেদের পর ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আগপর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা অর্পণ করে অবসরে যান ফিদেল।