শেষ বছরগুলোয় রাষ্ট্র চালাননি সাদ্দাম, লিখছিলেন উপন্যাস!

Looks like you've blocked notifications!
মার্কিন বাহিনীর হাতে ধরাশায়ী প্রবল পরাক্রমশালী ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আগেই ক্ষমতা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিলেন ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। সেই সময় তিনি উপন্যাস লেখা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, সেনাবাহিনী বা তাঁর অনুসারীরা কীভাবে দেশ চালোচ্ছে, সেদিকে তাঁর কোনো মনোযোগই ছিল না।

মার্কিন বাহিনীর হাতে আটকের পর সাদ্দাম হোসেনকে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদকারী সিআইএর সাবেক বিশ্লেষক জন নিক্সন এমন তথ্যই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওই মুহূর্তে তিনি আর সরকার চালাচ্ছিলেন না।’

নিক্সন বলেন, ‘ব্রিটিশ ও মার্কিন শত্রুরা যে ইরাকের ভেতর প্রবেশ করেছে বা ইরাকের ভেতরে আসলে কী হচ্ছে তাঁর কিছুই জানতেন না তিনি। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার আসলে কী করছে বা ইরাকের আসল সামরিক প্রস্তুতি কিছু নিয়েই তাঁর কোনো পরিকল্পনা ছিল না।’

সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর এই খবর বাইরে প্রকাশের আগে নিক্সনের দায়িত্ব ছিল এই স্বৈরশাসককে চিহ্ণিত করা। তিনি একটি পুরোনো বুলেটের ক্ষত এবং দুটি উল্কির মাধ্যমে সাদ্দামকে চিহ্নিত করেছিলেন।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত হতে যাওয়া জন নিক্সনের বই ‘ডিব্রিফিং দ্য প্রেসিডেন্ট : দি ইন্টারোগেশন অব সাদ্দাম হোসেন’-এ এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

নিক্সন বলেন, গ্রেপ্তারের পরও বেশ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছিলেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি যা করেছেন সে সম্পর্কে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নিক্সন সাদ্দাম হোসেনকে প্রশ্ন করেন, ‘শেষ কবে আপনার ছেলেকে জীবিত দেখেছেন আপনি?’

জবাবে ইরাকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনারা কারা? আপনারা কি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য? আমাকে জবাব দিন। নিজেদের পরিচয় দিন।’

পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশকে হত্যার পরিকল্পনা করেননি বলে জানান সাদ্দাম। নিজের এই বক্তব্যে শেষ পর্যন্ত অটল ছিলেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বাইরে বোমাবর্ষণের আওয়াজ পেয়ে খুশি হয়ে ওঠেন তিনি। ভেবেছিলেন, তাঁর অনুসারীরা হয়তো তাঁকে উদ্ধার করতে এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা হেরে যাবে। তোমরা বুঝতে পারবে যে ইরাক শাসন করা এত সহজ কাজ নয়।’

২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে বন্দি করার মাধ্যমে তাঁর শাসনের পতন ঘটে। এর তিন বছর পর ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।