বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে মিলেছে শিবলিঙ্গ, সিলগালার নির্দেশ আদালতের
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদ কমপ্লেক্সের একটি পুকুরে আজ সোমবার সকালে ‘শিবলিঙ্গ’ পাওয়া গেছে দাবি করে আদালতে হিন্দুত্ববাদীরা পিটিশন দায়ের করলে স্থানীয় আদালত পুকুরের এলাকাটি সিলগালা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এনডিটিভির প্রতিবেদনে আজ সোমবার এমনটি জানানো হয়েছে।
মসজিদ কমপ্লেক্সটিতে ভিডিও জরিপ করা নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তিন দিনের জরিপ কার্যক্রমের শেষ দিন ছিল আজ সোমবার। এদিন সকালে কমপ্লেক্সের মসজিদ সেচে পানি সরানোর সময় শিবলিঙ্গ মিলেছে বলে দাবি করেন সুভাষ নন্দন চতুর্বেদী নামের এক আইনজীবী। দীর্ঘদিন ধরে জ্ঞানবাপী মসজিদের পেছনের জায়গায় উপাসনার অনুমতি চেয়ে আসা একদল নারীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
পিটিশনে মসজিদের মুসল্লিদের অজুর জন্য ব্যবহার হওয়া পুকুর এলাকা সিলগালা করার অনুরোধ করা হলে আদালতে মঞ্জুর হয়। ওই এলাকায় কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বারাণসী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে মুসলিম পিটিশনারেরা বলছেন, সেটি ঝরনা ছিল, শিবলিঙ্গ নয়।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কৌশল রাজ শর্মা সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করতে পারেননি, সেখানে আদৌ শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে কিনা। তিনি বলেছেন, জরিপকারী কমিশনের কোনো সদস্য এর কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি। এসব তথ্যের এখতিয়ার একমাত্র আদালতের। কমিশনের এক সদস্যকে গতকাল বহিষ্কার করা হয়েছিল। কয়েক মিনিট পরই অবশ্য তাকে আবারও সদস্য হিসেবে নেওয়া হয়।’
বারাণসীর স্থানীয় আদালত মসজিদের তিনটি গম্বুজসহ পুরো এলাকায় ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে জরিপ চালানোর আদেশ দেন। এই জরিপ চলাকালে গত ৬ মে মসজিদের ভেতরে ভিডিও করা হলে এ নিয়ে বিতর্ক উঠলে কাজ স্থগিত করা হয়। মসজিদ কমিটি জানায়, মসজিদের ভেতরে ভিডিও করার আদেশ দেয়নি আদালত।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট ভিডিওগ্রাফির আদেশ বাতিল করে পুরো মামলাটি এপ্রিলে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এলাহাবাদের হাইকোর্টের এই আদেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়।
জ্ঞানবাপী মসজিদ ট্রাস্টের প্রতিনিধিত্বকারী একদল আইনজীবীও ভিডিও জরিপের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যান। তাদের দাবি, এটি প্রার্থনা আইন-১৯৯১-এর পরিপন্থি।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জরিপে ভিডিও করা বন্ধে অস্বীকৃতি জানায়। তবে মসজিদ কমপ্লেক্সের বেলায় মুসলিম পিটিশনারদের আবেদন বিবেচনায় নেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
এদিকে এ ঘটনায় উত্তর প্রদেশের ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ আদালতের সিলগালা করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। টুইটে বলেছেন, সত্য যতই লুকিয়ে রাখতে চান, তা বেরিয়ে আসবেই।’
অন্যদিকে অল ইন্ডিয়া ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘বাবরি মসজিদের পর, মুসলিমরা আরেকটি মসজিদ হারাতে প্রস্তুত নয়।’
উল্লেখ্য, অযোধ্যায় রামের জন্মভূমি, কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরার শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি, ভারতীয় হিন্দুদের প্রধান এই তিনটি উপাসনাস্থল নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। কারণ হচ্ছে, তিন উপাসনাস্থলে তিনটি মসজিদের অবস্থান। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, তিনটি উপাসনাস্থলের চরিত্র বদলে দিয়ে প্রাচীনকালে মুসলিম শাসকেরা সেখানে মসজিদ তৈরি করেছিলেন। অযোধ্যায় রামের জন্মস্থলে বাবরি মসজিদ, কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দির ভেঙে জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানে শাহি ঈদগাহ মসজিদ।