বিচারিক পরিবর্তন ও ফিলিস্তিনি হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলিদের সমাবেশ

Looks like you've blocked notifications!
তেল আবিভে জাতীয় পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ইসরায়েলিরা। ছবি : এএফপি

ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের বিতর্কিত পরিকল্পনা এবং অপরাধমূলক সহিংসতায় দেশটির ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের লোকজনের মৃত্যুর প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে হাজার হাজার ইসরায়েলি।

জানুয়ারিতে নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার শপথ নেওয়ার পরপর যে গণরোষ সৃষ্টি হয়েছিল তার সর্বশেষ প্রকাশ গতকাল শনিবারের গণবিক্ষোভ। তুঙ্গে ওঠা এই আন্দোলনে দুই লাখের বেশি মানুষ প্রতিবাদ জানায় আর বিক্ষোভ সমাবেশের সংগঠকরা বলেছেন প্রস্তাবিত আইনি পরিবর্তনের উদ্যোগটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা হাল ছাড়ছেন না। খবর আলজাজিরার।  

তেল আবিভের কেন্দ্রস্থলের একটি সমাবেশ থেকে মাইকেল গাট নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমাদের দেশটা কিছু চরমপন্থী দখল করে আছে… আমরা অপহৃত হয়ে আছি।’ বার্তা সংস্থা এএফপিকে ৪৭ বছর বয়সী ওই প্রযুক্তিকর্মী আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ধরে রাখা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’

প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকজন ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা সহিংস অপরাধের বিষয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে বিভিন্ন প্রতীক বহন করে।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের হিসেবে এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০২ জন ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ সহিংসতায় নাজারেথ শহরের ইয়াফিয়া এলাকার একটি কার ওয়াশ সেন্টারে বন্দুকধারীর গুলিতে পাঁচজন ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি মারা যায়।

ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিকরা অনেকদিন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধের বিষয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও বৈষম্যের অভিযোগ জানিয়ে আসছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া প্রতিবাদকারীদের একটি ব্যানারে কট্টরপন্থী নিরাপত্তা মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখা ছিল, ‘আমরা আরব সমাজে বেন-গাভিরকে আর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে দেব না।’ এছাড়া আরেকটি পোস্টারে লেখা ছিল, ‘মৃত শ্রেণির নাগরিক।’

সমাবেশের সংগঠকরা জানান, বিক্ষোভ হয়েছে হাইফা ও রিহোভোত শহরেও। হাইফাতে সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাক নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের অহিংস গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেন। ইঞুদ বারাক বলেন, ‘আমরা কোনো ভ্রান্তি-বিভ্রমে পড়ব না…এই প্রতিবাদ গণঅভ্যুত্থানে চূড়ান্ত রূপ নেবে, যা হবে অহিংস বেসামরিক অনাস্থা।’

এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু গত মার্চ মাসে আলোচনার কথা বলে তার বিচার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার বিষয়টিকে একরকম থামিয়ে রেখেছেন। তবে কয়েক মাসের আলোচনা কোনো ফলাফল বয়ে আনতে পারেনি।

তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে বিচার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর বিলটি চূড়ান্ত ভোটাভুটির জন্য আবারও পার্লামেন্টে যে কোনো মুহূর্তে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। এই বিলটি পাস হলে দেশটিতে সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়গুলোতে আদালতের কর্তৃত্ব কমে আসবে।

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন লিকুদ পার্টি, কট্টর ডানপন্থি ও অতিগোড়া ইহুদিবাদীদের সমন্বয়ে গড়া কোয়ালিশন সরকার তাদের ভাষায় দেশের আইনসভা ও বিচার ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য আনতে এই পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই বিলটি নাগরিক অধিকারের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দেবে।