জার্মানিতে আজ ন্যাটোর সবচেয়ে বড় মহড়া শুরু

Looks like you've blocked notifications!
একটি জার্মান ইসিআর টর্নেডো বিমান গত ৯ জুন উত্তর জার্মানির জেগেলের সামরিক বিমানবন্দরে অনুশীলনের সময় উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছবি : এএফপি

চার বছরের প্রস্তুতির পর পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিমান প্রতিরক্ষা মহড়া করতে যাচ্ছে৷ জার্মানির আকাশে ‘ন্যাটো সামরিক অনুশীলন এয়ার ডিফেন্ডার ২৩’ নামে এই মহড়া আজ সোমবার (১২ জুন) শুরু হয়ে চলবে ২৩ জুন পর্যন্ত।

তিনটি ফ্লাইট এলাকা বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য অস্থায়ীভাবে বন্ধ থাকবে৷ এতে বেসামরিক ফ্লাইট চলাচলে দেরি হতে পারে৷ জোটের কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে ন্যাটোর জবাব কেমন হবে মহড়ায় তা দেখানো হবে৷

১৯৪৯ সালে সামরিক জোট গঠিত হওয়ার পর এটি ন্যাটোর সবচেয়ে বড় মহড়া৷ জার্মানি এই মহড়ার ‘হোস্ট’ এবং ‘লজিস্টিক্যাল হাব’ হিসেবে কাজ করবে৷

১২ দিনব্যাপী এই মহড়ায় ২৫০টি বিমান ছয়টি সামরিক ঘাঁটি জুড়ে অবস্থান করবে৷ মহড়ায় ২৫টি দেশ অংশ নেবে৷ যুক্তরাষ্ট্র একাই আটলান্টিকজুড়ে ১০০টি বিমান পাঠাচ্ছে৷ আকাশ-মহড়ায় অংশগ্রহণকারীরা তিনটি ফ্লাইট অঞ্চলে সংকট পরিস্থিতিতে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেবে৷

উত্তর সাগরে উত্তর জার্মানির উপর, পূর্বে ও দক্ষিণ জার্মানির একটি ছোট স্ট্রিপে এই মহড়া চলবে৷ এই অঞ্চলগুলোতে দৈনিক পর্যায়ক্রমে কয়েক ঘণ্টা বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে৷

বেসামরিক বিমান চলাচলে দেরি

ইউরোপের আকাশ বিশ্বের ব্যস্ততম উড়ানপথের একটি৷ এয়ার ডিফেন্ডার-২৩ এর পাশাপাশি বেসামরিক বিমানের চলাচল যাতে প্রভাবিত না হয়, তা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে৷

সামরিক মহড়া চলাকালীন জার্মান বিমানবন্দরগুলো তাদের পরিচালনার সময়ও রাত অবধি বাড়িয়েছে৷ জার্মান বিমান বাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইঙ্গো গারহের্ৎজ বলেন, ‘আশা করি, এই সমস্ত ব্যবস্থা কার্যকর হলে, কোনো ফ্লাইট বাতিল হবে না৷’ তবে বিমান চলাচলে দেরি হওয়ার বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দেননি।

জার্মান বিমান চালনা বিশেষজ্ঞ ক্লেমেন্স বলিনজারের মতে, জার্মান বেসামরিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার অপারেটরদের কাজে সমন্বয় করা হয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ফ্লাইট কন্ট্রোলাররা বিমানবাহিনীতে তাদের সহকর্মীদের সঙ্গে একটানা যোগাযোগ বজায় রাখছেন৷

ফরাসি বিমান বাহিনী সাধারণ কোনো মহড়া বা অভিযান চলাকালীন নির্ধারিত ফ্লাইটের জন্য বারবার পুরো ফ্লাইট জোন বন্ধ করে দেয়৷ সেক্ষেত্রে জার্মানিতে বেসামরিক ও সামরিক ফ্লাইটগুলো প্রতিদিন একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে চলে৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মান এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের এটি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

প্রতিরোধের বার্তা দিচ্ছে ন্যাটো

জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের টরবেন আর্নল্ড বলেন, ন্যাটো তার এয়ার ডিফেন্ডার মহড়ার মাধ্যমে শত্রুপক্ষকে প্রতিরোধের একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা পাঠাতে চায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘তারা স্পষ্ট রাজনৈতিক সংকেত দিতে চায়৷ তারা বোঝাতে চায়, যদিও এই আকাশসীমা অত্যন্ত ব্যস্ত, তবু আমরা এর প্রতিটা কোনা রক্ষা করতে চাই৷’

ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর ১০ হাজারেরও বেশি সেনা বহু মহড়ায় অংশ নেবে৷ বিমান বাহিনীর তরফে গেরহার্ৎজ বলেন, এর মধ্যে কিছু মহড়া স্থলভিত্তিক হবে, যার মধ্যে একটি হলো ‘এয়ারফিল্ড থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া৷’ ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা আফগানিস্তানে তাদের মিশন দ্রুত শেষ করার পরে কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়৷ সেই সময়েই এই অনুশীলনটি সময়সূচিতে রেখেছিল ন্যাটো৷

আকাশ থেকে স্থল সেনাদের সমর্থন, শত্রু জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিমান এবং ন্যাটোর ফাইটার বোমারু বিমানের মধ্যম-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের বাধা এ জাতীয় পরিস্থিতিও মহড়ার অংশ হিসাবে থাকবে৷

মার্কিন বাহিনী মহড়ায় অংশ নিতে জোটের সবচেয়ে আধুনিক ফাইটার জেট এফ-৩৫ স্টিলথ কমব্যাট এয়ারক্রাফট পাঠাচ্ছে৷ নর্থ সি এলাকায় শত্রু সাবমেরিন বা জাহাজের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক মহড়া দেখা যাবে৷