ইতালির চারবারের প্রধানমন্ত্রী বার্লুসকোনির জীবনাবসান

Looks like you've blocked notifications!
ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি। ছবি : এএফপি

ইতালির শীর্ষস্থানীয় পুঁজিপতি থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি আজ সোমবার (১২ জুন) ৮৬ বছর বয়সে মিলান শহরে মারা গেছেন।

ডানপন্থী এই নেতা ১৯৩৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইতালির মিলান শহরে জন্মেছিলেন। দেশের রাজনীতিকে নতুন রূপ দেওয়া বার্লুসকোনি বেশি পরিচিত ছিলেন তার আর্থিক ও যৌন কেলেঙ্কারির জন্য। নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ ইতালির একটি প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।

বার্লুসকোনিকে প্রায়শই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করা হতো যিনি রিয়েল এস্টেট ও নির্মাণ ব্যবসার মাধ্যমে প্রথমে নিজের ভাগ্য গড়েছিলেন এবং ধীরে ধীরে দেশটির শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান।

৭০এর  দশকের শেষে এবং ৮০’র দশক জুড়ে বার্লুসকোনি তার গণমাধ্যম সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এরমধ্যে রয়েছে একটি পাবলিশিং হাউস, জনপ্রিয় ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক মিডিয়াসেট, যা ইতালির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেলের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ১৯৮৬ সালে তিনি দেউলিয়া হতে যাওয়া ইতালির অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব এসি মিলানকে কিনে নেন।

তবে ‘নাইট’ ডাক নামে পরিচিত বার্লুসকোনি ১৯৯৪ সালের আগে রাজনীতির মাঠে ছিলেন একদম অপরিচিত। নতুন ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ফোর্জা ইতালিয়া (ইংরেজি পরিভাষায়-গো ইতালি) গঠনের মাধ্যমে তিনি ইতালির রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেন। আর সে বছরই তিনি নির্বাচনে জয় লাভ করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন।

তবে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে জালিয়াতি ও ইতালির গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযোগে সমালোচনার মুখে এক বছরের মাথায় পদ ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু রাজনীতির মাঠে তার প্রভাব বজায় রাখেন তিনি।

তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি নতুন ভোটারদের বেশ ভালোভাবে আকর্ষণ করে। আর এভাবেই বার্লুসকোনি ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০১১ সালের শেষ নাগাদ তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। সে সময় ব্যাপক প্রচারণায় সাড়া ফেলা যৌন কেলেঙ্কারির জন্য পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে যান।

রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার পরে বার্লুসকোনি ইতালির ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর অন্যতম খোড়াকে পরিণত হন। এসময় ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক প্রতারণা ও গুজবের মতো বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে ২০টির বেশি মামলা হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭ বছর বয়সী এক মিশরীয় যৌনকর্মীর সঙ্গে যৌনকাজে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত হন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিচারের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি আইন পাসের জন্যও সিলভিও বার্লুসকোনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।

এতোসব কেলেঙ্কারির অধ্যায় বার্লুসকোনির জনপ্রিয়তায় ধস ডেকে আনে এবং পদত্যাগের পর বেশ কয়েক ধাপে সাময়িকভাবে টেকনোক্র্যাট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে।

বার্লুসকোনি মারা যাবার সময় রেখে গেছেন তার দুই সাবেক স্ত্রী, বর্তমান বান্ধবী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলেকে। উত্তরাধিকারী হিসেবে তারাই এখন মিডিয়াসেট টিভির নিয়ন্ত্রণ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।