তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়ার সঙ্গে অতিবৃষ্টি বাড়বে ১৫ শতাংশ : গবেষণা

Looks like you've blocked notifications!
পাকিস্তানের অতিবৃষ্টিতে হওয়া বন্যায় ডুবে গেছে  লাহোরের একটি মার্কেট। পানিতে চৌকি বসিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন একজন বিক্রেতা। এএফপির ফাইল ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রাও। উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিবৃষ্টির ঝুঁকিও বাড়ছে। এতে করে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পাহাড়ের নিচের দিকে বাস করা ২০০ কোটি মানুষ। বন্যা ও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে তারা। গবেষকরা বুধবার (২৮ জুন) এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর এএফপির।

জার্নাল নেচারে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রতি ডিগ্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই হাজার মিটার উঁচুতে অতিবৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। আর প্রতি এক হাজার মিটার ওপরে অতিবৃষ্টির মাত্রা বাড়বে এক শতাংশ করে।

শিল্পযুগের থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হলে বন্যার শঙ্কা আরও আধাগুণ বেড়ে যায়। প্রতিবেদনে লেখক সতর্ক করে জানিয়েছেন, আমাদের অবকাঠামোগুলো চরম বন্যায় টিকবে কিনা তা চিন্তা করে সেগুলো তৈরি করা হয়নি।

প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ইতোমধ্যে এক দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত গ্রীষ্মে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা পরিলক্ষিত হয়। আর চলতি বছরের শুরুতে একই অবস্থা দেখা যায় ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি অংশে।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান আইপিসিসির মতে, বর্তমানে যে পলিসিতে বিশ্ব এগুচ্ছে, সে অনুযায়ী এই শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নতুন যে গবেষণা চালানো হয়েছে তাতে সর্বশেষ ৭০ বছরের তথ্য উপাত্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জলবায়ু মডেলের ব্যবহার করেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে অতি বৃষ্টিপাতের পেছনে যে দুটি কারণ তা গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

এক ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার ফলে পরিবেশে সাত শতাংশ আর্দ্রতা বাড়ে বলে অনেক আগে থেকেই জানেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৫০ দশকের পর থেকে বিশ্বব্যাপী অতিবৃষ্টি বেড়েছে। ধারাবাহিকভাবে চলছে অতিবৃষ্টি। এ ছাড়া দাবদাহ, খরা ও মৌসুমি ঝড়ও বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এমনটি হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের মতে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইউরোপ, এশিয়া, মধ্য, পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে অতিবৃষ্টি সাধারণ হয়ে উঠেছে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনে প্রধান লেখক ও ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স বেকারলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষক মোহাম্মদ ওমবাদি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি ও ভারী তুষারপাত হয় কি না এই প্রথম কেউ তা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে। ঘন ঘন অতিবৃষ্টি ও তুষারপাতে বন্যা, ভূমিধস এবং মাটি ক্ষয়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে।’ ওমবাদির মতে, দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার মিটার উঁচুতে তুষারপাত পরিবর্তিত হচ্ছে বৃষ্টিপাতে।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, অতিবৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে পাহাড়ি অঞ্চল ও এর পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমিতে। হিমালয় ও উত্তর আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাহাড়ি অঞ্চল বেশি ঝুঁকিতে। ক্ষতি এড়াতে অঞ্চলগুলোর সরকারকে আগে থেকেই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকরা।