যুক্তরাষ্ট্রের মাউইয়ে ভয়াবহ দাবানলে নিহত ৫৩
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপে ভয়াবহ দাবানলে এ পর্যন্ত ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এক হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া এই আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। খবর বিবিসির।
মাউই কাউন্টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্য প্রায় পুরো দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। হাওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে তিন হাজার ২০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত। লস এঞ্জেলেস থেকে হনলুলু পর্যন্ত যাতায়াতে প্লেনে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে।
ড্রোন ও হেলিকপ্টারে ধারণ করা ফুটেজে দেখা গেছে, মাউইয়ের হাওয়াই দ্বীপের মধ্যদিয়ে দ্রুত দাবানল ছড়িয়ে পড়ে এবং আশপাশের এলাকাগুলো পুড়িয়ে ফেলেছে। হাজার হাজার মানুষকে তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, জরুরি পরিষেবার দলগুলো আগুন নেভাতে এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের বাঁচাতে যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করছে। ক্ষয়ক্ষতির পুরো পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। হাওয়াইয়ের লেফটেন্যান্ট গভর্নর সিলভিয়া লুক ধারণা করছেন, সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পেতে মাস খানেক সময় লেগে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হাওয়াইয়ের গভর্নর জোশ গ্রিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বাইডেন হাওয়াইয়ের দাবানলকে একটি ‘বড় দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং রাজ্যের উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করার জন্য অতিরিক্ত সরঞ্জাম ও কর্মী পাঠানো হবে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, দবানলে মাউয়ের ঐতিহাসিক লাহাইনা শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে কর্মকর্তারা বলেছেন, অন্তত ২৭০টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।
উটায় এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘যারা প্রিয়জন হারিয়েছে, যাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, তারা অবিলম্বে সহায়তা পাবে। সশস্ত্র বাহিনী সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকবে৷’
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা এই আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং বাসিন্দা ও পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ করছি। হাওয়াইয়ের মানুষের জন্য আমাদের প্রার্থনা রয়েছে। তবে কেবল আমাদের প্রার্থনা নয়, আমাদের প্রতিটি সহায়তা সামগ্রী তাদের কাছে পৌঁছাবে।’
এদিকে, পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র জানান, মার্কিন কোস্ট গার্ড ১৪ জনকে উদ্ধার করেছে, যারা আগুন থেকে বাঁচতে সমুদ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র প্যাট্রিক রাইডার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দাবানল মোকাবিলা ও ত্রাণ সরবরাহ করতে ১৩৪ ন্যাশনাল গার্ডের সৈন্যদের পাঠানো হয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানের কারণে হাওয়াইয়ের বেশ কয়েকটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে হাওয়াইয়ের গভর্নর জোশ গ্রিন বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, সবাই এটিকে বলবে--যেন লাহাইনায় একটি বোমা আঘাত করেছে।’
গভর্নর বলেন, ‘এখনও আগুন জ্বলছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, লাহাইনার ৮০ শতাংশ ছাই হয়ে গেছে। আমরা জানি, আরও লোক মারা গেছে। এই সংখ্যা খুব উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।’
জোশ গ্রিন ক্ষয়ক্ষতির সম্পর্কে সিএনএনকে বলেন, গত রাতে দুই হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে কাটিয়েছেন। মাউইর পশ্চিমাঞ্চলে এখনও ১১ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন। আগুনে প্রায় এক হাজার ৭০০ ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে, হাওয়াই পর্যটন কর্তৃপক্ষ বলেছে, বুধবার মাউই দ্বীপ থেকে ১৪ হাজারের বেশি পর্যটককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মাউইয়ের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ব্র্যাড ভেনচুরা বলেন, মঙ্গলবার থেকে মাউইজুড়ে বেশ কয়েকটি বড় দাবানলে কয়েকশ একর এলাকা পুড়ে গেছে। কোনো জায়গার আগুনই শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নেই।
পুলিশ প্রধান জন পেলেটিয়ার বলেছেন, ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছে তা নিশ্চিত নয় কর্তৃপক্ষ। তবে, তিনি ধারণা করছেন, প্রায় এক হাজার লোক নিখোঁজ রয়েছে। তার মানে এই নয়, তারা মারা গেছেন। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে পারেন বা যোগাযোগ করতে পারছেন না।
দ্বীপজুড়ে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে, যা লোকেদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে।