দুর্যোগ কমাচ্ছে ফসলের উৎপাদন, ক্ষতির মুখোমুখি গবাদি পশুও
তিন দশকের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে বিপুল ক্ষতি হয়েছে গবাদি পশুর। এই সময়ে তিন দশমিক আট ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ফসল ও গবাদি পশুর ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও। সংস্থাটির দাবি, একই কারণে প্রতি বছর ফসল উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। এ কমে যাওয়ার পরিমাণও খুব কম নয়, তার বাৎসরিক গড় হিসাব প্রায় ১২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কবলে বিপুল ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ফসল ও গবাদি পশু। খবর এএফপির।
এক গবেষণা প্রতিবেদনে এফএও আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) এসব তথ্য জানিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, ১৯৯১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বন্যা, খরা, পোকামাকড়ের হামলা, ঘূর্ণিঝড়, রোগবালাই ও যুদ্ধের জন্য প্রতি বছর গড়ে ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার মূল্যের ফসল উৎপাদন কমেছে। এর অর্থ, বাৎসরিক মোট উৎপাদনের পাঁচ শতাংশই উৎপাদন কমেছে। এই ফসল দিয়ে বছরে ৫০ কোটিরও বেশি মানুষকে খাওয়ানো যেত।
এএফপি বলছে, এবারই প্রথমবারের মতো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের সহযোগী কোনো সংস্থা। দুর্যোগের জেরে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে কতটুকু ক্ষতি হয়, তা এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়।
এফএওয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের উপপ্রধান পিয়েরো কনফ্রাটি এএফপিকে বলেন, ‘১৯৭০ সালের পর থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমাগত দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে খাদ্য উৎপাদনেও।’
আগের তুলনায় দুর্যোগের পরিমাণ বৃদ্ধি ও তীব্রতা বেড়েছে বলে গবেষণাটির সময় জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাটি খুঁজে পায়। সবশেষ ২০ বছরে বিশ্বজুড়ে ৪০০টিরও বেশি দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া মানুষ ও গবাদি পশুর মধ্যে রোগের হার বাড়ছে।
প্রতিবেদনে এফএও জানিয়েছে, বন্যা, পানির অভাব, খরা, কৃষি ফলন হ্রাস, মৎস্য সম্পদ হ্রাস, জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতি ও পরিবেশগত অবনতির কারণে একাধিক বিপদ এবং হুমকির মুখে রয়েছে বৈশ্বিক কৃষি খাত। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট দুর্যোগ এবং অতিমারী, মহামারি ও সশস্ত্র যুদ্ধ ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য দায়ী।
এফএও বলছে, গড় বার্ষিক শস্য উৎপাদন কমেছে ছয় কোটি ৯০ লাখ টন, যা ফ্রান্সের বার্ষিক উৎপাদনের সমান। এ ছাড়া ফল ও সবজির গড় উৎপাদন কমেছে চার কোটি টন। আর মাংস, মাছ ও ডিমের গড় উৎপাদন কমেছে এক কোটি ৬০ লাখ টন।
দুর্যোগের কারণে কৃষি খাতে ২৩ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এফএও। তারা বলছে, দুর্যোগের কারণে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে দরিদ্র দেশগুলো। দেশগুলোর কৃষিজ উৎপাদন কমেছে ১০ শতাংশেরও বেশি।
অঞ্চলভিত্তিক দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এশিয়া। দুর্যোগের কারণে এই অঞ্চলের কৃষিজ উৎপাদন চার শতাংশ কমেছে। এই অঞ্চলের মোট কৃষি খাতের ৪৫ শতাংশকে দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হয়। এ ছাড়া খরার কবলে ‘হর্ন অব আফ্রিকার’ দেশগুলোর কৃষিজ উৎপাদন কমেছে গড়ে ১৫ শতাংশ।