গাজায় ‘সেফ জোন’ করা সম্ভব না : জাতিসংঘ

Looks like you've blocked notifications!
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকার নাসের হাসপাতালের সামনে ইসরায়েলি হামলায় আহতদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ছবি : এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকাটির অভ্যন্তরেই বাস্তুচ্যুত হচ্ছে গাজাবাসী। আর হামলার কারণে গাজায় ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘ। খবর এএফপির।

আজ মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, যুদ্ধের শুরুর দিকে উত্তর গাজায় মনোনিবেশ করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। তবে, বর্তমানে তারা দক্ষিণের কিছু এলাকায়ও হামলা চালাচ্ছে। দক্ষিণে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের সেই অঞ্চল ছাড়তে বলছে ইসরায়েল।

জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে কায়রো থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন, ‘তথাকথিত নিরাপদ অঞ্চল বৈজ্ঞানিক নয়, যৌক্তিক নয়, সেগুলো সম্ভব নয়। আমি মনে করি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সচেতন।’

ইউনিসেফ মুখপাত্রের মন্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন কি না দক্ষিণ গাজায় হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, হামাসের হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।

হামাসের এ হামলার প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনের হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা ও পশ্চিম তীরে ক্রমাগতভাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাস নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনীর আকাশ, নৌ ও স্থলপথে চালানো হামলায় প্রায় ১৫ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। যার ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

এদিকে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে যায় ইসরায়েল ও হামাস। এ সময়ে ৮০ ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয় সশস্ত্র সংগঠনটি। বিপরীতে ইসরায়েলের জেলে বন্দি থাকা ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে, গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি শেষে দুপক্ষের হামলা শুরু হয়। উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি শর্ত লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে।

এদিকে, যুদ্ধবিরতি শেষে হামলা আরও বেগবান করেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজার বাসিন্দারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছোটাছুটি করছে। তবে, তারা নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না।

ইউনিসেফের মুখপাত্র বলেন, ‘ইসরায়েলের একতরফাভাবে ঘোষিত সেফ জোন নিরাপদ বা মানবিক হতে পারে না।’ দীর্ঘ এক সপ্তাহ গাজায় অবস্থান করা এল্ডার বলেন, ‘মূলত নিরাপদ অঞ্চল কোনটি সেটি নির্দিষ্ট নয়। এমনকি সেফ জোনের অস্তিত্ব নেই। থাকলেও তা শুধুমাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশ।’

সেফ জোনোর প্রসঙ্গ টেনে ইউনিসেফের মুখপাত্র বলেন, ‘সেখানে কোনো পানি নেই, পরিষেবা নেই। ঠাণ্ডা বা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো কোনো আশ্রয়স্থলও নেই।’

গাজার বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রতি ৪০০ জনের জন্য প্রায় একটি টয়লেট রয়েছে বলে জানান এল্ডার। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষদের সরিয়ে দেন এবং তাদের তথাকথিত নিরাপদ অঞ্চলে নিয়ে যান। সেই অঞ্চলে ১০ হাজার মানুষের জন্যও একটি টয়লেট নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। নিরাপদ অঞ্চল রোগের অঞ্চলে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’